খোলাবাজারে বিক্রি করা জীবন্ত প্রাণী থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে মরণঘাতী জীবাণু। দিন দিন খোলাবাজারের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনি নিয়ন্ত্রণে না নিলে অবস্থা আরও ভয়াবহ হবার সম্ভবনা রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু প্রতিদিনই বাড়ছে। চীনের উহানে গত ৩১ ডিসেম্বর মানুষের অজ্ঞাত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বন্যপ্রাণী থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে, প্রাথমিকভাবে এমনটিই ধারণা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ছড়ানো ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা করোনাভাইরাসের এমন বিস্তারে বাস্তব ধারণা পাচ্ছে বিশ্ববাসী। খোলাবাজারে বিক্রি করা জীবন্ত প্রাণী থেকে যে রোগগুলো এসেছে তার সঙ্গে মানুষকে বারবার যুদ্ধ করতে হয়েছে। করোনাভাইরাসের আগে সর্বশেষ উদাহরণ ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাস। খোলাবাজারে বিক্রি করা জীবন্ত প্রাণীদের মল, বিষ্ঠা বা মূত্র থেকে যেমন মরণঘাতী জীবাণু ছড়াতে পারে, তেমনি যেখানে মাংস কাটা হয় সেই স্থানটিও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তায় ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে বিক্রয় ও প্রক্রিয়াজাত কর্মীদের দেওয়া হয়েছিল বিশেষ ভাইরাস প্রতিরোধী পোশাক, মাস্ক, গ্লাভসসহ আরও কিছু উপকরণ। সেই সঙ্গে তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল টাইলসের বিশেষ অবকাঠামো। তবে সেই দিকে এখন কোনোই নজরদারি নেই কোনো কর্তৃপক্ষের। হাঁস-মুরগি বিক্রি, জবাই, পরিষ্কার করা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা সবই এখনো অনিরাপদই রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, ঢাকা সিটি করপোরেশন, আইসিডিডিআরবি এসব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করত বিশেষ কমিটির সমন্বয়ে। তখন বাজার থেকে বার্ড ফ্লু বিস্তার রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। সপ্তাহে একদিন বাজার বন্ধ রেখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ব্যবসায়ীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা, হাঁস-মুরগি জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াজাত কাজে নিয়োজিত কর্মীদের নিরাপত্তামূলক পোশাক পরিধান কার্যক্রম জোরালো করা হয়েছিল। কিন্তু সে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বহু আগেই।
আর চলমান এই করোনা পরিস্থিতিতে খোলা বাজারে বিক্রি করা প্রাণী থেকে ভাইরাসজনিত রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাণীবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে খোলাবাজার থেকে। এসব বাজারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্যপ্রাণী বিক্রি কেবল জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে না, বরং অজানা রোগ একটি প্রাণী থেকে আরেকটি প্রাণীতে ছাড়াও ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের মাঝে। গত মাসেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করোনাভাইরাস সম্পর্কিত টাস্ক ফোর্সের অন্যতম ইমিউনোলজিস্ট অ্যান্থনি স্টিফেন ফাউসি বিশ্বজুড়েই ওয়েট মার্কেট বা খোলাবাজার বন্ধের কথা বলেছিলেন।
তবে তিনি হয়তো ইন্দোনেশিয়ার তমোহন মার্কেটের কথা চিন্তা করেই একথা বলেছিলেন। দেশটির উত্তর সুলাওয়েসির এই পাহাড়ি শহরে বাস করেন মিনাহাসা গোত্রের মানুষেরা এবং বিচিত্র বন্যপ্রাণীর বাস রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ওই বাজারে। তবে শূকর, অজগর বা বানর বিক্রি করার এই বাজারের সঙ্গে তুলনা না হলেও দুনিয়াজুড়ে খোলাবাজারগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এই মুহূর্তে।