হাল সময়ের বহুল আলোচিত মসজিদের নাম তুরস্কের হাজিয়া সোফিয়া। নানা ঘটনা-পরিক্রমা শেষে দীর্ঘ ৮৬ বছর পর মসজিদটিতে নামাজ শুরু হয়েছে।
তবে হাজিয়া সোফিয়ার সবসময়ই ছিলো মুসলমানদের হৃদয়ে। এর প্রমাণ মেলে বাহরাইনের রশিদ আল জায়ানি মসজিদটি দেখলে। বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল লতিফ বিন রশিদ আল জায়ানির উদ্যোগে তুরস্কের হাজিয়া সোফিয়ার নকশার আদলে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বাহরাইনের গেলানি শহরে অবস্থিত চমৎকার এই মসজিদে দেড় হাজারের মতো মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত এই মসজিদে নামাজ পড়ার জায়গা ছাড়াও রয়েছে, ক্লাস রুম, সেমিনার কক্ষ ও একটি পাঠাগার।
২০১২ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৫ সালে। মসজিদের গম্বুজটি রুপালি পাত দিয়ে ঢাকা। আধুনিক নির্মাণ সরঞ্জাম দিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটি নতুন হলেও প্রচুর মানুষ তা দেখতে আসেন।
গালফের সবচেয়ে ছোট দেশ বাহরাইনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন আর কারুকার্যে ভরা বেশকিছু মসজিদ। তন্মধ্যে আল ফাতেহ গ্র্যান্ড মসজিদটি রাজধানী মানামায় অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদ।
১৯৮৭ সালে শেখ ইসা ইবনে সালমান আল খলিফা মসজিদটি নির্মাণ করেন। বাহরাইন বিজয়ী আহমেদ আল ফাতেহের নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়।
প্রায় সাত হাজার মানুষ একসঙ্গে এ মসজিদে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের দু’টি সুউচ্চ মিনার মসজিদটিকে করেছে বেশ আকর্ষণীয়। ভারতের সেগুন কাঠের কারুকার্য খচিত টেকসই দরজাগুলো মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। ফাইবার গ্লাস দিয়ে নির্মিত গম্বুজগুলো মসজিদকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্য। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফাইবার গ্লাসের গম্বুজওয়ালা মসজিদ।
মসজিদের মেঝেতে ইটালিয়ান মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। অস্ট্রিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে ঝলমলে ঝাড়বাতি। দেওয়ালে খচিত রয়েছে প্রাচীন নির্মাণশৈলীর ‘কুফিক’ ক্যালিগ্রাফি। যা ভেতরের পরিবেশকে করেছে মনোমুগ্ধকর। এসব ক্যালিগ্রাফি সাজানো হয়েছে কোরআন এবং হাদিসের বাণী দিয়ে।
বাহরাইন অর্থ ‘দুই সমুদ্র’। একসময় স্বর্গদ্বীপ হিসেবে একে অভিহিত করা হতো দেশটিকে। উপসাগরের এই দেশটিতেই প্রথম তেলের সন্ধান পাওয়া যায়। শোধনাগারও তারাই প্রথম তৈরি করে। একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ দেশটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৭৮৩ সাল থেকে ৭৬৫ বর্গকিলোমিটারের দেশ বাহরাইন শাসন করছেন খলিফা পরিবার। সাংবিধানিকভাবে রাজতান্ত্রিক এই দেশে নির্বাচিত পরিষদ রয়েছে। আকারে ক্ষুদ্র হলেও তেলসম্পদের কারণে অর্থনৈতিকভাবে দেশটি বেশ সমৃদ্ধ। বাহরাইনের ব্যাংকিং খাত অনেক শক্তিশালী। নাগরিকদের মধ্যে শিয়ার সংখ্যা বেশি হলেও শাসক পরিবার সুন্নি।
উল্লেখিত মসজিদ বাদে বাহরাইনে আরও বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন মসজিদ রয়েছে। সেগুলো হলো-
খামিস মসজিদ। বলা হয়, এটি বাহরাইনের সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ। মসজিদটি উমাইয়া আমলে নির্মিত। এর নির্মাণশৈলীই বলে দেয় মসজিদটি অনেক প্রাচীন।
ঈসা বিন আলী মসজিদ। এটি বাহরাইনের একটি প্রসিদ্ধ মসজিদ। প্রখ্যাত আরব শায়খ ঈসা বিন আলী এটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি শায়খ ঈসার বাড়ির পাশে অবস্থিত।
বাইতুল কোরআন। এটি মূলত একটি বহুমুখী কমপ্লেক্স। এখানে কোরআন গবেষণার কাজ বেশি হয়। তবে এটি একটি মিউজিয়াম। এখানে কোরআনে কারিমের বহু পুরোনো কপি সংরক্ষিত আছে। হজরত উসমান (রা.) কর্তৃক লিখিত কোরআনের কপিসহ ৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রিত ল্যাটিন ভাষায় কোরআনের অনুবাদও এখানে সংরক্ষিত আছে। ১৯৮৪ সালে এই মসজিদ কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৯৯০ সালে তা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
১৯৮০ সাল থেকে বাহরাইনে প্রায় আড়াই শতাধিক বাংলাদেশি ইমাম ও মুয়াজ্জিন হিসেবে বিভিন্ন মসজিদে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কামাল উদ্দিন নামে এক বাংলাদেশি এক মুয়াজ্জিন একই মসজিদের বাহরাইনি ইমাম আবদুল জলিলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃসংশভাবে খুন করে। এর ফলে বেশ কিছু ইমাম-মুয়াজ্জিনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। ইমাম-মুয়াজ্জিন ছাড়াও দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন।