মসজিদে মাদরাসা পরিচালনা সংক্রান্ত পরামর্শ

মাসয়ালা, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 21:49:15

বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই দেখা যায়, জামে মসজিদে মাদরাসা পরিচালনা করা হচ্ছে। কিংবা মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত জমিতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নানা সময় জটিলতাও দেখা গেছে। অথচ একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত জটিলতা এড়ানো সম্ভব। এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো-

এক. মসজিদের ওপর ও নিচতলাসহ পুরোটাই মসজিদ হিসেবে বহাল রাখা আবশ্যক। তাই মসজিদে স্থায়ীভাবে মাদরাসা বা অন্যকিছু প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তবে ইসলাম শিক্ষা, কোরআন শিক্ষা, দ্বীন শিক্ষা যেহেতু মসজিদের মৌলিক উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের অংশবিশেষ। হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে দ্বীন শিক্ষার গোড়াপত্তন করেছেন। তাই মসজিদে প্রয়োজনীয় দ্বীন শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা শরিয়তের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে মসজিদকেন্দ্রিক শিক্ষা হওয়া উচিত অনাবাসিক। স্থায়ীভাবে আবাসিক মাদরাসা করা যাবে না। কোনো এলাকায় দ্বীন শিক্ষার জন্য পৃথক ব্যবস্থা না থাকলে অস্থায়ী ভিত্তিতে ভিন্ন আয়োজন হওয়া পর্যন্ত মসজিদে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এক্ষেত্রে উস্তাদ, ছাত্র ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবশ্যই মসজিদের সম্মান ও আদব যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

মসজিদের আদব ক্ষুন্ন হয় এমন আচরণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সেই সঙ্গে নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগিতে বিঘ্ন ঘটে এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। পৃথক ব্যবস্থা হলে আবাসিক ব্যবস্থা মসজিদ থেকে সরিয়ে নিতে হবে।

দুই. মসজিদের উন্নয়নের জন্য ওয়াকফকৃত জায়গা মসজিদের কাজে ব্যবহার করাই শরিয়তের বিধান। দ্বীন শিক্ষার উদ্দেশ্যে পৃথক জায়গার ব্যবস্থা করে তাতে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কর্তব্য। মসজিদের জায়গায় স্থায়ীভাবে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে মসজিদের অতিরিক্ত জমি যদি এখনই মসজিদের কাজে না লাগে, তাহলে মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেখানে সাময়িকভাবে মাদরাসার জন্য ঘর বানানো যাবে এবং তাতে মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। পরবর্তীতে যখনই ওই জায়গা মসজিদের প্রয়োজন হবে তখন তা মসজিদের জন্য দ্রুত খালি করে দিতে হবে।

তিন. মসজিদ স্বতন্ত্র একটি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হলো, মসজিদের মোতাওয়াল্লি বা তার লোকজন ওয়াকফকারীর উদ্দেশ্য সাধন করে যাবে। তাই ধর্মীয় আইনবেত্তারা বলেছেন, মসজিদের আয় মসজিদের খাতেই ব্যয় করতে হবে। যদি কোনো মসজিদের যাবতীয় খরচ নির্বাহের পরও তার আয় থেকে যায়, তাহলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নিম্নোক্ত কাজগুলো করা যেতে পারে-

১. যৌক্তিক পরিমাণে ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের বেতন-ভাতা বাড়ানো।
২. মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতিব ও খাদেমদের জন্য পৃথক আবাসন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
৩. মুসল্লিদের জ্ঞান চর্চার লক্ষে মানসম্মত ও যুগোপযোগী পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. সকল শ্রেণি-পেশার মুসলামনদের জন্য খণ্ডকালীন দ্বীন শেখার আয়োজন করা। বিশেষ করে বয়স্কদের কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করা গুরুত্ব দিয়ে।
৫. এলাকার স্কুলগামী ছেলে-মেয়েদের জন্য পৃথকভাবে সহিহশুদ্ধভাবে কোরআন ও ইসলামের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের জন্য মানসম্মত শিক্ষার আয়োজন করা।
৬. মুসল্লিদের নামাজ, ইতিকাফ ও অন্যান্য ইবাদত আদায়ে আরাম হয়- এমন ব্যবস্থা করা। মানসম্মত অজুখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও টাকা উদ্বৃত্ত থাকলে তা রেখে দেওয়া মসজিদের জন্য নির্ধারিত তহবিলে। যেন ভবিষ্যতে মসজিদের সম্ভাব্য নির্মাণ, সংষ্কার, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য খরচ করা যায়। এ পরিমাণ টাকা গচ্ছিত রাখার পরও টাকা অতিরিক্ত হলে তা আশপাশের এমন কোনো মসজিদে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে, যাদের টাকার প্রয়োজন। এমনকি তখন দ্বীনী তালিম যেহেতু মসজিদের মৌলিক কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত, তাই কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে, ওই টাকার অংশবিশেষ মাদরাসার খাতে খরচ করতে পারবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর