রংপুর: ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ রংপুর জেলায় ব্রিটিশ স্থাপত্যের স্মারক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে বড়বিল কলি দলি আমীন মসজিদটি। রংপুর মহানগরী থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাচড়ার পশ্চিমে বড়বিল মন্থনাহাট পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্রিটিশ শাসনামলে মসজিদটি নির্মিত হয়। বর্তমানে মসজিদেরপাড় নামে ওই এলাকাটি পরিচিত। প্রায় পৌনে ২০০ বছর আগে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য দেশি-বিদেশি পর্যটক আসে।
কলি দলি আমীন মসজিদটি ১২৪৮ বঙ্গাব্দে নির্মিত হয়। স্থানীয় মিয়া পরিবারের কলি আমীন ও দলি আমীনের প্রচেষ্টায় নির্মিত এই মসজিদটিতে রয়েছে বিস্ময়কর কিছু তথ্য।
স্থানীয়দের দাবি, মসজিদটি নির্মাণে ঘিয়ে ভাজা ইট ব্যবহার করা হয়েছিল। অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন ১৩ জন রাজমিস্ত্রি এই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। যাদের সবাই ছিল অচেনা মানুষ। এটি নির্মাণের সময় ১৩ জন রাজমিস্ত্রি কাজ করলেও খাবার খেত ১২ জন। তারা সবাই লম্বা এবং একই রকম দেখতে হওয়ায় খাওয়ার সময় ১৩ জনের মধ্যে বাদ পড়া একজনকে খুঁজে বের করা যেত না। বিস্ময়কর এই মসজিদটি নির্মাণকালে ইট ভাজতে ব্যবহৃত বড় আকৃতির কড়াইটি এখনো কলি আমীন ও দলি আমীনের বংশ মিয়া পরিবারের কাছে ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫২ ফিট দৈর্ঘ্য ও ২১ ফিট প্রস্থ বিশিষ্ট এ মসজিদের ছাদে রয়েছে ৩টি গম্বুজ। যার মাথায় রয়েছে ৪ ফিট উঁচু নকশা। ভেতরের প্রতিটি ইটে ভিন্ন আঙ্গিকের নকশা। এছাড়াও মসজিদের চার কোনায় ৪টি এবং পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যখানে ছোট আকারের ৪টি গম্বুজ আছে। মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী বর্তমানে বিরল।
কলি দলি আমীন মসজিদটি নির্মাণের ১ বছর পর ভূমিকম্পে এটি প্রায় ৫ ফিট দেবে যায়। তাই অনেকের কাছে এটি দাবা মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন মসজিদটি আল্লাহের হুকুমেই সেখানে ভেসে উঠেছে। এ মসজিদের দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ আজও মানুষকে মোহিত করে। এ কারণে মসজিদের কাছে এলে অনেকেই সেখানে খানিকটা সময় কাটিয়ে যান। বর্তমানে মসজিদটিতে মুসল্লিদের নামাজের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এর গা ঘেঁষে ৩ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির নির্মাণ দাবিদার মিয়া পরিবার। সেই পরিবারের প্রবীণ সদস্য ইলিয়াছ মিয়া জানান, মসজিদটি নির্মাণের ইতিহাস তিনি তার পূর্বসূরীদের মুখে শুনেছেন। ওই মসজিদ সম্পর্কে লোকমুখে শোনা বিস্ময়কর তথ্যগুলো যুগের পর যুগ ধরে মুখে মুখে প্রচার হয়ে আসছে। এ সময় তিনি ওই মসজিদের ইট ভাজতে ব্যবহৃত কড়াইটি তাদের কাছে সংরক্ষণে রয়েছে বলেও জানান।
স্থানীয় ইকবাল সুমন জানান, কলি আমীন ও দলি আমীন নামে দুই ভাইয়ের প্রচেষ্টায় মসজিদটি নির্মিত হয়। এ কারণে ওই দুজনের নামেই মসজিদের নাম। মসজিদের ইতিহাস এলাকার ছোট বড় সব মানুষের মুখে একই রকম। এটি ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত হয়েছে।
এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু জানান, ঐতিহাসিক এই মসজিদ রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্য। এই মসজিদের যেমন সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তেমনি রয়েছে অলৌকিক কিছু অজানা তথ্য। এ কারণে এই মসজিদ সাধারণ মানুষকে আকর্ষিত করে। অনেকেই মসজিদটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বেড়াতে আসে। মসজিদটির সংস্কারসহ অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা কাজ করে যাচ্ছে।