শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহমাতুল্লাহি আলাইহি ছিলেন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। এ জাতির ওপর তার অবদান ব্যাপক। শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের জন্যও তিনি কাজ করে গেছেন। সহিহ বোখারির সর্বপ্রথম বঙ্গানুবাদসহ লেখালেখির ময়দানের তার অবদান অপরিসীম রয়েছে। হাদিসের দরসদানের পাশাপাশি রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বোখারি শরিফ পড়িয়েছেন। দেশ-বিদেশে তার অসংখ্য ছাত্র রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে মুহাম্মদপুর জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মিলনায়তনে ‘বরেণ্যদের চোখে শাইখুল হাদীস’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত ‘শাইখুল হাদীস রহ.-এর জীবন ও কর্ম শীর্ষক’ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
মাওলানা গাজী সানাউল্লাহ রাহমানী ও মাওলানা আতাউর রহমানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক। আলোচনা সভায় রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের আলেম-উলামা, মসজিদের ইমাম-খতিব ও লেখক-সম্পাদকরা অংশ নেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক একটি আলোকিত নাম। নতুন প্রজন্মকে তার জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানতে হবে। তার সংগ্রাম-সাধনা থেকে উদ্দীপ্ত হয়ে জীবনকে গড়তে হবে। হাদিসের দরস থেকে শুরু করে লেখালেখি, রাজনীতি, মসজিদের মিম্বর ও ওয়াজের ময়দানেও তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। তার জীবন থেকে বিশেষ কোনো দিককে আলাদা করা কঠিন।
বক্তারা শাইখুল হাদিস (রহ.)-এর জীবন নিয়ে বরেণ্য ব্যক্তিদের এ স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থটি সবাইকে পড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বইটি পড়লে মনে হবে, শাইখুল হাদিস (রহ.) আপনার পাশে বসে আছেন।
জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল ও শাইখুল হাদিস (রহ.)-এর সাহেবজাদা মাওলানা মাহফুজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- মাওলানা নুর হুসাইন কাসেমী, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতি দেলোয়ার হুসাইন, মাওলানা ইসমাঈল বরিশালী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, মাওলানা যাইনুল আবিদীন, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, ইসমাঈল নুরপূরী, মাওলানা আশরাফুজ্জামান, মাওলানা মাহবুবুল হক, মুফতি এনায়েতুল্লাহ, মুফতি সাঈদ আহমাদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা ওয়াজেদ আলী, মুফতি শাহেদ রাহমানী ও মাওলানা সফিক প্রমূখ।
‘বরেণ্যদের চোখে শাইখুল হাদীস’ গ্রন্থে শীর্ষস্থানীয় আলেম, শাইখুল হাদিসের রাজনৈতিক সহকর্মী, প্রিয় ছাত্র ও পরিবারের সদস্যসহ ৩৯ জনের সাক্ষাৎকার স্থান পেয়েছে। এটি একটি সাক্ষাৎকারধর্মী প্রামাণ্য গ্রন্থ। ভবিষ্যতে এটি ইতিহাসের প্রয়োজনীয় দলিল হিসেবে জায়গা করে নেবে। গ্রন্থটি সংকলন করেছেন মাওলানা মুহাম্মদ এহসানুল হক। তিনি জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শিক্ষক, মাসিক রাহমানী পয়গামের সহকারী সম্পাদক ও হজরত শাইখুল হাদিস (রহ.)-এর নাতি।
এর আগেও তিনি শাইখুল হাদিসকে নিয়ে- ‘ছেলেবেলায় শাইখুল হাদীস, বাবরি মসজিদ লংমার্চ, অন্তরঙ্গ আলোকে শাইখুল হাদীস’ নামে আলাদা তিনটি গ্রন্থ সংকলন করেছেন।
বিভিন্নজনের জবানে, চিন্তায় এবং দৃষ্টিতে একজন মানুষের মূল্যায়নধর্মী জীবনীমূলক গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের এক নতুন অভিমুখ। জনশ্রুতি, গালগল্প ও অপ্রমাণিত উপাদানের বিপরীতে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ পাঠকের সামনে উপস্থিত করেছেন লেখক। মনীষাদের এমন জীবনীর প্রতি পাঠকের তীব্র ও অপার আগ্রহ রয়েছে।
বইয়ের ভূমিকায় বিদগ্ধ লেখক মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন অনেক কিছু স্পষ্ট করে বলেছেন। তার মতে, ‘এই গ্রন্থের সবগুলো সাক্ষাৎকারই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারা এবং তাদের সমকালীনরাও নিয়মিত পড়েছেন এগুলো কাগজের পাতায়। কোনো ভুল বা অসঙ্গতি প্রকাশিত হলে তা জানবার ও শোধরে নেবার সুযোগ হয়েছে যেমন, তেমনি শুদ্ধতায় এগুলোর মূল্যও বেড়েছে অনেক।’
সংগ্রামী ও দায়িত্ববান একজন পিতা কিংবা শিক্ষক, রাজনীতির ময়দানের একজন যোগ্য নেতা হিসেবে শাইখুল হাদিসকে আবিষ্কারের প্রয়াসে চার শতাধিক পৃষ্ঠার এই গ্রন্থে পরিস্ফুট মানুষটি হোক নতুন প্রজন্মের আলোর দিশা।
এই বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে পয়গাম প্রকাশন তাদের যাত্রা শুরু করেছে। আমরা এই বইয়ের বহুল প্রচার ও প্রকাশনীর সাফল্য কামনা করি।