বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবিউস সানি মাসের চাঁদ দেখা গেছে। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) থেকে রবিউস সানি মাস গণনা শুরু হবে। সে হিসেবে আগামী ১১ রবিউস সানি (২৭ নভেম্বর) শুক্রবার পবিত্র ফাতেহায়ে ইয়াজদহম উদযাপিত হবে বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে।
গাউসুল আজম বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর ওফাত দিবস ‘ফাতেহায়ে ইয়াজদহম’ নামে পরিচিত। ‘ইয়াজদহম’ ফারসি শব্দ, অর্থ এগারো। ‘ফাতেহায়ে ইয়াজদহম’ বলতে রবিউস সানি মাসের ১১ তারিখের ফাতেহাকে বোঝায়। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর স্মরণে এ ফাতেহা পাঠ করা হয়। হিজরি ৫৬১ সনের ১১ রবিউস সানি তিনি ইন্তেকাল করেন।
বড়পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর নাম প্রত্যেক মুসলমানের কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে তার প্রভাব অপরিসীম। তার জীবনী ও কীর্তিগাথা মুসলমানদের হৃদয়ে চিরদিন জীবন্ত হয়ে আছে ও থাকবে। একজন আদর্শ পুরুষ হিসেবে বিশ্ব জগতে মুসলমানদের কাছে হজরত বড়পীর পরম ভক্তি, শ্রদ্ধার পাত্র।
হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর বাবার নাম সৈয়দ আবু সালেহ এবং মায়ের নাম বিবি ফাতেমা। হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) ৪৭০ হিজরিতে ইরানের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাগদাদের হজরত আবু সাঈদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন মাখরুমি (রহ.)-এর কাছে মারেফাতের জ্ঞানে পূর্ণতা লাভ করেন এবং খেলাফত প্রাপ্ত হন।
এ কথা অনস্বীকার্য হজরত আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর অবদান বিশ্বে অনন্য। তবে তার ওফাত উপলক্ষ্যে ঘটা করে দিনটি পালন করাকে উলামায়ে কেরাম জায়েজ মনে করেন না। কেননা ইসলাম এ ধরনের অনুষ্ঠানসর্বস্ব বিষয়কে স্বীকৃতি দেয় না।
ইসলামি শরিয়তে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস পালনের নিয়ম নেই। নবী-রাসূল, খোলাফায়ে রাশেদিন ও সাহাবায়ে কেরাম আমাদের জন্য আদর্শ। তাদের কারোরই জন্মদিবস-মৃত্যুদিবস পালন করার কথা ইসলামি শরিয়তে নেই। তাদের জন্ম বা মৃত্যুদিবস পালন করতে হলে তো বছরের প্রতিদিনই পালন করতে হবে। অথচ নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরাম তো সকল অলিআল্লাহ, পীর-বুজুর্গেরও আদর্শ। আর এজন্যই বুজুর্গানে দ্বীন নিজেদের জন্মদিবস পালন করেননি বা অনুসারীদেরকে জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবস পালনের আদেশ করেননি। পরবর্তী যুগের লোকেরা তা উদ্ভাবন করেছে।
ফাতেহায়ে ইয়াজদহম সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে তারিখে ‘ফাতেহায়ে ইয়াজদাহম’ পালন করা হয় অর্থাৎ এগারো রবিউস সানি তা ঐতিহাসিকভাবে শায়খ আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মৃত্যুদিবস হিসেবে প্রমাণিত নয়। কারণ তার মৃত্যুর তারিখ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে মতভেদ রয়েছে।
‘তাফুরিহুল খাতির ফি মানাকিবিশ শায়খ আবদুল কাদির’ নামক তার জীবনীগ্রন্থ এ সম্পর্কে কয়েকটি মত উল্লেখ করা হয়েছে। রবিউস সানির নয় তারিখ, দশ তারিখ, সতেরো তারিখ, আঠারো তারিখ, তেরো তারিখ, সাত তারিখ ও এগারো তারিখ। আবার কারও কারও মতে রবিউল আউয়ালের দশ তারিখ। এই আটটি মত উল্লেখ করার পর গ্রন্থকার দশই রবিউস সানিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। -ফাতাওয়া রহিমিয়া: ২/৭৬-৭৭
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা হাফেয যাহাবি (রহ.) বলেছেন, ‘তিনি নব্বই বছর বয়সে ৫৬১ হিজরির রবিউস সানির দশ তারিখে ইন্তেকাল করেন।’ -তারিখুল ইসলাম: ২৯/৬০
এছাড়া ইতিহাস ও আসমাউর রিজালের অন্যান্য কিতাবেও আট, নয় ও দশ তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগারো তারিখ নয়।
আর মৃত্যুর তারিখ নিয়ে মতবিরোধ না থাকলেও ‘মৃত্যুদিবস’ পালন করা শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত নয়; বরং বছরের যেকোনো দিন নেককার বুজুর্গদের জীবনী আলোচনা করা যায় এবং তাদের জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। তা না করে নির্দিষ্ট একটি দিনে জায়েয-নাজায়েজ বিভিন্ন রকমের কাজকর্মের মাধ্যমে দিবস উৎযাপন করা রসম ও বিদআত ছাড়া আর কিছু নয়।
এই ধরনের বিদআত ও রসম পালনের মাধ্যমে খোদ শায়খ আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মতো বুজুর্গ অলিদের অবমাননাই করা হয়। আর আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টিসহ বিদআতের অন্যান্য শাস্তি তো রয়েছেই। তাই এ ধরনের দিবস পালন থেকে বিরত থাকা কাম্য।