আশুরা কি এবং কেন এই দিনটি এত গুরুত্বপূর্ণ, সেই সম্পর্কে অনেক মুসলিমদের মাঝে সঠিক এবং স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। তাইতো অনেকক্ষেত্রে আশুরা নিয়ে ঘুরে ফিরে কারবালার কাহিনীকে প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়। যা সঠিক নয়।
বস্তুত আশুরা এমন একটি দিন, যেই দিনটিকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্ব দিয়েছেন কিন্তু একটি বিষয় লক্ষণীয় সেই সময় কিন্তু কারবালার ঘটনাটি ঘটেনি। অর্থাৎ কারবালার ঘটনা আশুরার সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিষয় নয়।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি। তা হলো- কারবালার নির্মম ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে হিজরি ৬৬১ সনে। অর্থাৎ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরে। তাই আশুরার দিনের আমলের সঙ্গে কারবালার প্রান্তরের কোনো যোগসূত্র নেই। কারণ এ ব্যাপারে প্রতিটি মুসলিম মাত্রই অবহিত যে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর শরীয়তে আর নতুন কোনো বিধান সংযোজন বা বিয়োজনের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
তাহলে প্রকৃতপক্ষে কোন ঘটনাটি আশুরার সঙ্গে সম্পৃক্ত? তবে বিভিন্ন হাদিস ও ইতিহাসের আলোকে বুঝা যায় যে, আশুরার সঙ্গে একাধিক বিষয় জড়িত।
আশুরার আসল তাৎপর্য হলো- হজরত মূসা আলাইহিস সালামের বিজয়। এ বিষয়ে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় এলেন তখন তিনি লক্ষ্য করলেন ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এই দিনে রোজা রাখার তাৎপর্য কি? তারা বললো- এই দিনটির অনেক বড় তাৎপর্য রয়েছে, আল্লাহ হজরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীদের বাঁচিয়ে ছিলেন এবং ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে ছিলেন এবং মূসা আলাইহিস সালাম এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোজা রাখতেন আর তাই আমরাও রাখি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মূসা আলাইহিস সাল্লামের আরো বেশি নিকটবর্তী সুতরাং তোমাদের চেয়ে আমাদের রোজা রাখার অধিকার বেশি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখতেন এবং অন্যদেরকে এই রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ –সহিহ মুসলিম: ২৫২০
এই হাদিস থেকে জানা গেলো, আশুরার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ফেরাউনের বিরুদ্ধে মূসা আলাইহিস সাল্লামের বিজয়। এই দিন (১০ মহররম) আল্লাহতায়ালা নাস্তিক ফেরাউনের বিরুদ্ধে মূসা আলাইহিস সাল্লামকে বিজয় দান করেছিলেন। যে ঘটনার বিবরণ কোরআনে কারিমে সবিস্তারে বলা হয়েছে।
এই মহররমের ১০ তারিখেই হজরত ইবরাহিম (আ.) -এর বিজয় ও দাম্ভিক নমরুদের পরাজয় ঘটে। এ ঘটনাও পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে।
উপরোক্ত দুই ঘটনাকে সামনে রাখলে এটা পরিষ্কার ও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আশুরার প্রকৃত তাৎপর্য হলো- আল্লাহতে অবিশ্বাসী দাম্ভিকতার পরাজয় আর আল্লাহতে বিশ্বাসীদের বিজয়ের দিন অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত আকারে বললে বলা যায়, আশুরা হচ্ছে- বিশ্বাসীদের বিজয় দিবস। অথচ আশুরার এই প্রকৃত তাৎপর্য থেকে আমরা সম্পূর্ণ (অজ্ঞ ও) বেখবর হয়ে রয়েছি।
আশুরার এই ঘটনা থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পর কারবালার ঘটনা সংগঠিত হয়েছিল। কিন্তু না জানার কারণে আশুরা আসলেই আমরা কারবালার ঘটনা বিশ্লেষণ করতে থাকি। অথচ এই দিনটি যে বিশ্বাসীদের বিজয় দিবস আর দাম্ভিকতার পতন দিবস সে সম্পর্কে আমাদের কোনো বোধদয়ই হয় না!