বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়েছে এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশ মিয়ানমার। সঙ্কটের মধ্যেই ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নিঃস্ব মানুষের মাঝে বিনামূ‚ল্যে খাবার বিতরণ করছে দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াংগুনের একটি মসজিদ।
সেপ্টেম্বর থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে নগরীর সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ হাসপাতাল, কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ও দরিদ্র লোকদের মাঝে প্যাকেট খাবার বিতরণ করছেন ইয়াংগুনের নিউ আয়ে সুন্নি জামে মসজিদের সদস্যরা। খাবার বিতরণের পাশাপাশি অভাবীদের সহযোগিতার জন্য তারা প্রয়োজনীয় তহবিলও সংগ্রহ করছেন।
প্রাথমিকভাবে হালাল খাবার কিনতে সামর্থ্যহীন কোয়ারেন্টিনে থাকা মুসলমানদের সাহায্যের জন্য এই খাবার সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় দেশটির অর্থনীতিতে ভাঙনে এই উদ্যোগের পরিবর্তন ঘটে। এখন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ শ’ ভাইরাস শনাক্তের হারে দশকের পর দশক সামরিক শাসনের অবহেলায় থাকা স্বাস্থ্যখাত ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
কিন্তু মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াঙ্গুনের হিন্দু মন্দির, গির্জা ও সিনাগগের মধ্যে সমন্বয় দেখা গেছে। তারা নিজ ধর্মের লোকদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। পিছিয়ে নেই মুসলিমরাও। মুসলমানরা মসজিদ বিভিন্ন মহল্লার অভাবীদের সাহায্য করছেন। অসুস্থ ও কর্মহীনদের পাশে দাঁড়িয়ে তারা নজির স্থাপন করেছেন।
বিশেষ করে ইয়াংগুনের নিউ আয়ে সুন্নি জামে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। এই মসজিদ থেকে প্রতিদিন সকাল-বিকাল আড়াই হাজার খাবার প্যাকেট সরবরাহ করা হয়। এসব খাবার শুধু মুসলমানরা নয়, বিভিন্ন চিকিৎসাকর্মী ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। বিশাল এই কার্যক্রমের রান্নাঘরে যুক্ত থাকা ১২০ স্বেচ্ছাসেবক প্রতিদিন মাস্ক, চুলের জালি ও প্লাস্টিক গ্লাভস পরে খাবার প্রস্তুত করেন।
ইয়াঙ্গুন মসজিদের একজন ট্রাস্টি ফারুক জাও বলছিলেন, ‘আমরা খাবার বিতরণের সময় কখনও তাদের পরিচয় ও ধর্ম বিশ্বাসের কথা জানতে চাই না।’
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে মুসলমানদের উদ্যোগে খাবার বিতরণ সম্প্রীতির এক বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিশেষ করে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের লোকদের অত্যাচার করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর বিশ্ববাসীর সমালোচনায় রয়েছে দেশটি। তার পরও মিয়ানমারের মুসলমানদের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সহায়তার এমন ঘটনা বেশ সাড়া ফেলেছে।
-দ্যা ইসলামিক ইনফরমেশন অবলম্বনে