বরিশালের চরমোনাই দরবারের বার্ষিক মাহফিল বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বাদ জোহর পীর সাহেব চরমোনাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের উদ্বোধনী বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। মাহফিলটি ফাল্গুন মাসের মাহফিল নামে সমধিক পরিচিত। মাহফিলে আগত মুসল্লিদের জিকিরের ধ্বনিতে পুরো এলাকা মুখরিত।
উদ্বোধনী বয়ানে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ‘চরমোনাই মাহফিল দুনিয়াবি কোনো উদ্দেশ্যে নয় বরং পথভোলা মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য।’ এ সময় আগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখানে দুনিয়াবি কোনো স্বার্থের কারণে আসার প্রয়োজন নেই। যদি এমন কেউ এসে থাকেন, তবে নিয়ত পরিবর্তন করে আত্মশুদ্ধির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।’
আমিরুল মুজাহিদিন মুফতি রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘যারা চরমোনাইতে নতুন এসেছেন, তারা দুনিয়ার ধ্যান-খেয়াল বিদায় করে দিয়ে আখেরাতের খেয়াল অন্তরে জায়গা দিন। দিল থেকে বড়ত্ব এবং আমিত্ব বের করে আল্লাহর পথে নিজেকে বিলীন করে দিন।’
পীর সাহেব চরমোনাই এবারের মাহফিলে যুবকদের ব্যাপক উপস্থিতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের যেকোনো বড় ধরনের পরিবর্তনে যুব সমাজের ভূমিকা অগ্রগামী। সুতরাং যুব সমাজ যদি চারিত্রিকভাবে ভালো হয়, তবে সমাজের বিদ্যমান অনাচার-অবিচারের মূলোৎপাটন সময়ের ব্যাপার।’
পীর সাহেব তার উদ্বোধনী বয়ান শেষে মাহফিলের নিয়ম-কানুন সম্পর্কেও মুসল্লিদের অবহিত বর্ণনা করেন।
চরমোনাই মাদরাসার মূল মাঠসহ আশেপাশের পাঁচটি মাঠ নিয়ে চরমোনাইর এ বার্ষিক মাহফিলে সারাদেশ থেকে কয়েক লাখ মুসুল্লি অংশ নিয়েছেন। মাহফিলে আগতরা বয়ান শোনার পাশাপাশি জিকির-আজকার, কোরআন তেলাওয়াত ও নফল ইবাদতে মশগুল থাকবেন আগামী তিনদিন।
এবারের মাহফিলে মূল ৭টি বয়ান ছাড়া অন্য সময়গুলোতে নায়েবে আমিরুল মুজাহিদীন মুফতি ফয়জুল করিম, চরমোনাই কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, চরমোনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের, শায়েখ ফজলুল করিম (রহ.)-এর ভাই মাওলানা সৈয়দ নাসির আহমাদ কাওছার, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ জিয়াউল করীমসহ দেশ-বিদেশের শীর্ষ আলেমরা গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করবেন।
মাহফিল এলাকায় আইন-শৃংখলা রক্ষায় বরিশাল মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির পরিচালনায় বিশাল স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে।
মাহফিলে আগত মুসল্লিদের চিকিৎসার জন্য একশ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে দেশের খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিনরাত সেবা দেবেন।
মাহফিলের শেষ দিন শুক্রবার হওয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে চরমোনাই মাদরাসা ময়দানে। ঐতিহাসিক এ আধ্যাত্বিক মিলনমেলা শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই।
এদিকে চরমোনাই দরবার শরিফের বার্ষিক মাহফিলে যোগদানেচ্ছুদের হাজার হাজার যানবাহনে লাখ লাখ মুসুল্লিদের জিকিরে প্রকম্পিত হচ্ছে দেশের ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের ১২৪ কিলোমিটার এলাকা। সারাদেশ থেকে সড়কপথে চরমোনাই দরবার শরিফে পৌঁছতে মুসুল্লিরা বরিশাল-ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক ব্যবহার করছেন।
আর এ মহাসড়ক ধরে চরমোনাই দরবার শরিফমুখি যানবাহনের মুসুল্লিরা অনবরত জিকিরের সঙ্গে দীর্ঘপথ অতিক্রম করছেন। মুসল্লিদের আল্লাহ-আল্লাহ জিকিরে দিনরাত প্রকম্পিত হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী জাতীয় এ মহাসড়ক। এমনকি এ মহাসড়কের বরিশাল প্রান্তের ‘মেজর জলিল সেতু’, ‘বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’ ও ‘শহিদ আবদুর রব সেরনিাবাত সেতু’গুলোর টোল প্লাজাতে গত কয়েকদিন ধরে যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। টোল প্লাজায় থামার সময়ও মুসুল্লিরা জিকির অব্যাহত রাখায় ওইসব এলাকার সাধারণ মানুষও জিকির করছেন।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলা মাস অনুযায়ী করে চরমোনাইতে অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন মাসে দু’টি ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে অগ্রহায়ণের মাহফিল কিছুটা ছোট পরিসরে হলেও ফাল্গুন মাসে মাহফিলে মুসল্লি সমাগম হয় রেকর্ড সংখ্যক।