কোরআনে কারিম মানব জাতির হেদায়েত, কল্যাণ, শান্তি ও পরকালীন মুক্তির নির্দেশনা। কোরআন তেলাওয়াতে মানুষের আত্মশুদ্ধি ঘটে, কোরআন মানুষকে উচ্চতর মর্যাদায় আসীন করে। তাই বিশ্বের তরুণ ও যুব সমাজকে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নে মনোযোগী হতে হবে।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি এসব কথা বলেন। পবিত্র কোরআন প্রতিযোগিতাটি ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিট্যাল ঢাকা-২০২০’ উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত কোরআন তেলাওয়াত, তাফসির ও হিফজ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সবসময় শীর্ষস্থান লাভ করে দেশকে বিশ্ব দরবারে গৌরবোজ্জ্বল করেছে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে বাংলাদেশে সর্বাধিক মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, হাফেজ, আলেম ও দ্বীনের প্রচারক রয়েছেন। দেশের আলেম-উলামা ও হাফেজদের উন্নয়নে বর্তমান সরকার বহুমূখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি সব মাদরাসাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় নিজস্ব অর্থায়নে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সেখানে হিফজুল কোরআনের ব্যবস্থাও রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি বলেন, দেশের তরুণ সমাজ ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সচেতন। এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান শিক্ষা অর্জনে তরুণ সমাজ অনেক বেশি অনুপ্রাণিত হবে। এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের দেশের প্রতিযোগীরা অংশগ্রহণ করে বরাবরের মতোই শীর্ষস্থান অধিকার করে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।
স্বাগত বক্তব্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, কোরআন তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও কোরআনের বিধি-বিধান অনুশীলনে যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করা এবং বিশ্ববাসীর কাছে কোরআনের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম পিএইচডির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্ণরস এর গভর্ণর ড. মাওলানা মোহাম্মদ কাফিলুদ্দিন সরকার, ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরাম (আইসিওয়াইএফ) সভাপতি তাহা আয়হান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব সাব্বির আহমেদ চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আখতার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও শীর্ষস্থানীয় আলেমরা উপস্থিত ছিলেন।
কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে। এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা, ইউরোপ, ওশেনিয়া এবং বাংলাদেশ এই ৬টি অঞ্চলের সমন্বয়ে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে। ছয় অঞ্চল থেকে ৩ জন করে নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নিয়ে মোট ১৮ জন প্রতিযোগী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নেবেন। সেখান থেকে চূড়ান্তভাবে তিনজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
আইসিওয়াইএফ সচিবালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একটি জুরি বোর্ড গঠন করেছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা পরিচালনা করবে আইসিওয়াইএফ। স্বাগতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালনা করবে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আইসিওয়াইএফ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত হবে।
উল্লেখ্য, মুসলিম বিশ্বের তরুণদের দৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াস এবং নানামুখী কৃতিত্বে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ইসলামিক কো-অপারেশন ইয়ুথ ফোরাম ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর ওআইসি সদস্যভুক্ত দেশসমূহকে ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল’-এর স্বীকৃতি প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ‘ওআইসি যুব রাজধানী’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।