শ্রীলঙ্কা সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টানদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাদের কবর দেওয়া হবে ভারত মহাসাগরের মান্নার উপসাগরে ইরানাথিবু দ্বীপে।
এর আগে সংখ্যালঘুদের লাশ পুড়িয়ে ফেলতে বা দাহ করতে বাধ্য করা হলেও তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছিল। কারণ ইসলাম ধর্মে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নিয়ম নেই।
ইরানাথিবু দ্বীপটি রাজধানী কলম্বো থেকে তিন শ’ কিলোমিটার দুরে এবং দাফনের জন্য এই দ্বীপকে নির্বাচিত করার কারণ হিসেবে এর কম ঘনবসতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বাধ্যতামূলক দাহ করার নীতি থেকে সরকার সরে আসার ঘোষণা দিলে তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তও তাদের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করা হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কায় করোনায় আক্রান্ত এ পর্যন্ত মারা গেছে ৪৫০ জন। এর মধ্যে তিন শ’ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।
সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর ইমরান খানের সফরের পর সংখ্যালঘুদের দাফনের সিদ্ধান্ত আসে শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফ থেকে।
তবে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসঙ্ঘ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
কলম্বো গেজেট জানিয়েছে, সরকারের মুখপাত্র কেহেলিয়া রামবুকভেলা বলেছেন, দ্বীপটির এক পাশে এ জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের নিরাপদে দাফনের জন্য পর্যাপ্ত গাইডলাইন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
তবে লাশ পুড়িয়ে ফেললে ইনফেকশন ছড়াবে না, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। বরং দাহ করাকে একটি সাংস্কৃতিক চর্চা হিসেবেই দেখা হয়।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসঙ্ঘ হাই কমিশনার বলেছেন, দাহ করার নীতি মুসলিম, ক্যাথলিক ও কিছু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং তাদের পরিবারের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
কিছু মুসলিম ও খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতারা শ্রীলঙ্কা সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
‘এটি একটি হাস্যকর সিদ্ধান্ত’ বলছেন শ্রীলঙ্কা মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহামেদ।
এদিকে ওই দ্বীপের একজন ধর্মযাজক মাধুথিন পাথিনাথার বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে স্থানীয়রা কষ্ট পেয়েছে। ‘আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি। এটা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর।’
তিনি বলেন, ওই দ্বীপে আড়াই শ’র মতো তামিল বসবাস করে। যারা ৯০-এর দশকে গৃহযুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছিলো।