অনন্য সুন্দর একটি পাখি। নাম হুদহুদ। পাখিটিকে দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। সৌদি আরবে শীতের অবসান এবং বসন্ত শুরুর অন্যতম লক্ষণ হলো- হুদহুদ পাখির আগমন।
হুদহুদকে ইতিহাসের পাখিও বলা হয়। এটি আকারে ছোট, সৌন্দর্যে অনন্য। হজরত সোলায়মান আলাইহিস সালামের রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত হতো এই পাখি। তিনি পশু-পাখিদের ভাষা বুঝতেন। আল্লাহতায়ালা তাকে এই অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী করেছিলেন। একজন নবী এবং একই সঙ্গে রাজার অনেক কাজ করত হুদহুদ পাখি। বিশেষ করে পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে কী হচ্ছে, কী চিন্তা-ভাবনা চলছে, কোথায় কী ঘটছে, কোন রাজা কোথায় সৈন্য পাঠাচ্ছে, কেন পাঠাচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য হজরত সোলায়মান (আ.) হুদহুদ পাখি ব্যবহার করতেন।
পবিত্র কোরআনের ২৭ নম্বর সূরা আন নমলের ২০ থেকে ৩১ নম্বর আয়াতে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে হুদহুদ পাখির উল্লেখ রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একদিন হজরত সোলায়মান (আ.) পক্ষীদের খোঁজ-খবর নিলেন, অতঃপর বললেন, কী হলো, হুদহুদকে দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিত? আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা হত্যা করব যদি না যে অনুপস্থিত থাকার যথাযথ কারণ দেখায়। কিছুক্ষণ পর হুদহুদ এসে বলল, আপনি অবগত নন এমন একটি বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। আমি সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি। আমি এক নারীকে সাবাবাসীদের ওপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতএব তারা সৎপথ পায় না। -সূরা আন নমল: ২০-২৪
হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) একদা নও মুসলিম ইহুদি পন্ডিত আবদুল্লাহ বিন সালামকে জিজ্ঞাসা করেন, এত সব পাখি থাকতে বিশেষভাবে হুদহুদ পাখির খোঁজ নেওয়ার কারণ কী ছিল? জবাবে তিনি বলেন, হজরত সোলায়মান (আ.) তার বিশাল বাহিনীসহ ওই সময় এমন এক অঞ্চলে ছিলেন, যেখানে পানি ছিলো না।
আল্লাহতায়ালা হুদহুদ পাখিকে এই বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যে, সে ভূগর্ভের বক্ষসমূহকে এবং ভূগর্ভে প্রবাহিত পানি ওপর থেকে দেখতে পায়। হজরত সোলায়মান (আ.) হুদহুদকে এজন্যেই বিশেষভাবে খোঁজ করছিলেন যে, এতদঞ্চলে কোথায় মরুগর্ভে পানি লুকায়িত আছে, সেটা জেনে নিয়ে সেখানে জিন দ্বারা খনন করে দ্রুত পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যায়।
একদা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) হুদহুদ পাখি সম্পর্কে বর্ণনা করছিলেন। তখন নাফে ইবনুল আযরক্ব তাকে বলেন, জেনে নিন হে মহাজ্ঞানী! হুদহুদ পাখি মাটির গভীরে দেখতে পায়। তবে তাকে ধরার জন্য মাটির ওপরে বিস্তৃত জাল সে দেখতে পায় না। যখন সে তাতে পতিত হয়। জবাবে ইবনে আববাস (রা.) বলেন, যখন তকদির এসে যায়, চক্ষু অন্ধ হয়ে যায়। চমৎকার এ জবাবে মুগ্ধ হয়ে ইবনুল আরাবি বলেন, এরূপ জবাব দিতে কেউ সক্ষম হয় না, কোরআনের আলেম ব্যতীত।
হুদহুদ পাখির দৈহিক গঠন, বিশেষ করে মাথার লম্বা চূড়া আর পালকের বিন্যাস বেশ চমকপ্রদ। প্রজনন ঋতুতে মাথার লম্বা চূড়ায় কিছুটা লালচে আভা দেখা যায়। মাটি থেকে গাছের ডালে উড়ে বসলে খোপাটি ছড়িয়ে গিয়ে পাখার মতো খুলে যাওয়ার দৃশ্যটি প্রকৃতপক্ষেই মনোমুগ্ধকর।