রমজান/রামাদান আরবি শব্দ, যার মূল হলো ‘রামিয়া’ বা ‘আর-রামম’, যার অর্থ ‘তাপমাত্রা’ বা ‘শুষ্কতা’। এ মাসে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর ‘সাওম’ পালন করা ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। ‘সাওম’ আরবি শব্দ, যাকে ফারসি ভাষায় ‘রোজা’ বলা হয়। দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশের বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতে ‘সাওম’ ও ‘রোজা’ উভয় শব্দই ব্যবহৃত হয়। যেমন, এ অঞ্চলে সাধারণভাবে ‘সালাত’ (আরবি) এবং ‘নামাজ’ (ফারসি) উভয় শব্দই ব্যবহৃত হয়। কয়েক শতাব্দী মুসলিম শাসনামলে ফারসি ছিল উপমহাদেশের প্রধান ও সরকারি ভাষা। ফলে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত বহু গুরুত্বপূর্ণ-প্রয়োজনীয়-ব্যবহারিক শব্দ ও বিষয় আরবির পাশাপাশি ফারসিতেও মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।
রমজান ইসলামী বর্ষপঞ্জি ‘হিজরি সাল’ অনুসারে নবম মাস, যে মাসে বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ রোজা পালন করেন। রমজান মাসে রোজা পালন ইসলামের পাঁচটি ফরজ বা অবশ্য পালনীয় কাজের তৃতীয়তম। আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার প্রতি ঈমান ও নামাজের পর রোজার অবস্থান। তারপর অবশ্য পালনীয় অন্য দুটি ফরজ হলো হজ ও জাকাত।
রমজান মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ৩০ দিন হয়। প্রতিটি মুসলমানের আগ্রহ ও নজরের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে রমজান মাস। অন্যভাবে বললে, ইসলামী জীবনাচার ও সংস্কৃতিতে প্রতিটি মুসলিম নর-নারী মাহে রমজান বা রোজার মাসের জন্য অধীরে অপেক্ষা করেন। এমনকি, হিজরি সপ্তম মাস রজব এবং অষ্টম মাস শাবান থেকেই রমজানের জন্য অপেক্ষা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকেন। স্বয়ং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব ও শাবান মাসে এই দোয়া বেশি বেশি পড়তেন আর তা হলো: ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রামাদান’। যার অর্থ হলো: ‘হে আল্লাহ, রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন’ (মুসনাদে আহমাদ: ২৫৯)।
রমজানের প্রস্তুতি স্বরূপ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে ১০টি নফল রোজা রাখতেন এবং শাবান মাসে ২০টি নফল রোজা রাখতেন। নবীজি রমজানের পূর্ণ মাস ফরজ রোজা ছাড়া বছরের সবচেয়ে বেশি নফল নামাজ, রোজা, ইবাদত রমজানের পূর্ববর্তী শাবান মাসে পালন করতেন। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখো।’
ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, রজব আল্লাহ তায়ালার মাস, শাবান নবীজির মাস আর রমজান হলো উম্মতের মাস। এর অর্থ হলো, রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে মনের ভূমি কর্ষণ করা, শাবান মাসে আরো বেশি ইবাদতের মাধ্যমে মনের জমিতে বীজ বপণ করা আর রমজান মাসে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল ঘরে তোলার ব্যবস্থা করা।
ফলে অতীব গুরুত্বপূর্ণ রমজান মাস আসার আগেই, রজব ও শাবান মাস থেকেই, এ মহান রমজান মাসের আগমন বার্তা ঘোষিত হতে থাকে এবং প্রতিটি মুসলিম নর-নারী রমজান পাওয়ার জন্য আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার কাছে প্রতিনিয়ত কায়োমনো বাক্যে দোয়া করতে এবং প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
রমজানের প্রস্তুতির মূল উদ্দেশ্য ও রোজার তাৎপর্য হলো: নিজের আত্মীক ও শারীরিক পরিশুদ্ধি লাভ, খোদাভীতি বা তাকওয়া অর্জন এবং সর্বপরি রমজানে ঘোষিত রহমত, বরকত, নাজাত, মাগফেরাত পাওয়ার লক্ষ্যে সর্বাত্মক চেষ্টায় চালানো। এজন্য প্রতিটি বছর অতি মোবারক ও কল্যাণময় রমজান মাসের জন্য যেমন অপেক্ষা করতে ও প্রস্তুতি নিতে হয়, তেমনিভাবে রমজানের দিন ও রাত্রি তথা প্রতিটি সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা সঠিক ও সার্থকভাবে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তৎপর ও মনোযোগী হওয়া প্রতিটি মুসলিম নর-নারী অবশ্য কর্তব্য।