আল্লাহপাকের অপার কৃপায় নাজাতের দিনগুলো আমরা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ।
রমজানে একজন মুমিনের প্রত্যাশা থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আমরা আমাদের ইবাদত-বন্দেগি করতে থাকবো। আমাদের ইবাদত-বন্দেগি তিনি গ্রহণ করবেন কি করবেন না তা একান্তই দয়াময় আল্লাহর বিষয়।
তাই আমাদের কাজ হচ্ছে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করতে থাকে। তিনিই ভাল জানেন, তার কোন বান্দাকে তিনি তার রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের চাঁদরে আবৃত করে নিবেন।
আসলে পবিত্র মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুমিনের আধ্যাত্মিক বাগান ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে ওঠে। মুমিন-মুত্তাকির আত্মা প্রশান্তি লাভ করে। তারা পরম করুণাময় আল্লাহকে লাভ করে একান্তভাবে। বিষয়টি এভাবেও বলা যায় যে, রমজান হলো একজন মুমিনের ফসল তোলার মাস। সারা বছর সে যে ইবাদত করে তার চুড়ান্ত ফল লাভ করে এই রমজানে।
আল্লাহতায়ালা রোজাদারের মুখের গন্ধকে এজন্যই পছন্দ করেন, কেননা তার বান্দা কেবল তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যেই নিজেকে রোজা রাখতে বাধ্য করেছে এবং ইবাদতে রত হয়েছে। ফলে আল্লাহ তার এমন বান্দাকে খুব পছন্দ করেন। এমন বান্দাদের জন্য বিশেষ রহমত ও ফজলের বাতাস প্রবাহিত করেন। ইহজগতেও তাকে নিজের আশ্রয়ে রাখেন এবং পরকালেও জান্নাতের উত্তরাধিকারী করেন।
এই পবিত্র মাসের পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে হজরত রাসুল করিম (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘মানুষ যত কাজ করে তা তার নিজের জন্য আর রোজা রাখা হয় কেবল আমার জন্য। সুতরাং আমি নিজেই এর পুরস্কার বা আমি নিজে এর পুরস্কার দিব।’
তাই বিষয়টা গভীর ভাবে ভাবা উচিত, যার পুরস্কার স্বয়ং আল্লাহ নিজে, সেখানে কিভাবে আমাদেরকে রমজানের এই রোজাগুলো রাখা চাই। আমাদের রোজা কেবল তার সন্তুষ্টির জন্যই হতে হবে, কোন লোক দেখানো যেন না হয়। কেননা, লোক দেখানো কোন আমল আল্লাহপাক পছন্দ করেন না।
পবিত্র রমজান মাসের সাথে ইবাদতের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। রমজান মাসকে যদি এ ক্ষেত্রে ইবাদতের মেরাজ বলা হয় তাহলে অত্যুক্তি হবে না। পবিত্র রমজান মাসের ইবাদতের বদৌলতে আল্লাহর অশেষ ফযলে মানুষের গুনাহ মাফ হয়ে থাকে।
আল্লাহতায়ালার নৈকট্য, তার দীদার লাভের ও আধ্যাত্মিকতার উন্নয়ন যা রমজান মাসের মূল লক্ষ্য তা সবই এ মাসের ইবাদতের ফল। আর কতই না উত্তম হতো যদি রমজান মাসের ইবাদতের যে অভ্যাস তা যদি আমাদের মাঝে সারা বছর বজায় থাকতো।
সারা বছরের শান্তি, নিরাপত্তা ও নিরাপদের খাতিরে রমজানের পবিত্রতা ও এর অধিকারের প্রতি আমাদেরকে অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে। রমজান মাসের ইবাদতগুলি আমাদেরকে শর্ত মোতাবেক আদায় করতে হবে। রমজানের রোজা হচ্ছে ইবাদতের দরজা স্বরূপ। এ সম্পর্ক হজরত নবী করিম (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের একটি দরজা থাকে আর ইবাদতের দরজা হল রোজা’ (জামেউস সাগির)।
রমজান মাসে যদি অধিক নফল ইবাদত করা যায় তাহলে তা হবে একজন মুমিনের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত।
তাই আসুন, পবিত্র রমজানের অবশিষ্ট এ দিনগুলো বিশেষ ইবাদতে রত হয়ে অতিবাহিত করি আর পরম দয়াময় প্রভুর দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে ক্ষমা করে তার সন্তুষ্টির চাদরে জড়িয়ে নেন, আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল- masumon83@yahoo.com