রমজানের এ শেষ দশকে অর্থাৎ নাজাত বা মুক্তির দশকে রয়েছে সৌভাগ্য রজনী লাইলাতুল কদর আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের এ রাতকে সকল রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। এ রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ ও তাৎপর্য। এ সৌভাগ্যময় রজনীতে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন নাজিল করেছেন।
মহান এ রাত সম্পর্কে আল্লাহপাক তার পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআনে বলেন,
‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ (কদর) রাতে এবং তোমাকে কিসে অবহিত করবে যে, ‘লাইলাতুল কদর’ কি? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষাও উত্তম। ঐ রাতে ফেরেস্তাগণ এবং কামেল রূহ সকল তাদের প্রতিপালকের হুকুম অনুযায়ী যাবতীয় বিষয়সহ নাযেল হয়।’ (সুরা কদর)
তাই এ সৌভাগ্য রজনী লাভ করার জন্য আল্লাহ রাসুল রমজানের শেষ দশদিন অনেক বেশি চেষ্টা-প্রচেষ্টা করতেন। আর রমজানকে বিদায় দিতে গিয়ে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের এমনটি হয়ে থাকতো যে আধ্যাত্মিক বসন্ত নিজের চমক দেখিয়ে যখন বিদায় নেয়ার ক্ষণে পৌঁছে যেত তখন তিনি (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন আর রমজানের কল্যাণরাজিতে নিজ ডালি ভরে নিতে কোন ত্রুটি করতেন না।
মহানবীর (সা.) শেষ দশকের ইবাদত সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণিত একটি হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি রমজানের শেষ দশকে প্রবেশ করলে তিনি (সা.) কোমর বেঁধে নিতেন অর্থাৎ খুবই তৎপর হতেন এবং নিজ রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জীবিত করতেন। সাথে সাথে মহাবী (সা.) তার পরিবার পরিজনকেও জাগাতেন (বোখারি, কিতাবুস সওম)।
রমজানের এই শেষ দশকের একটি রাতে এসে থাকে লাইলাতুল কদর। এই দশকে মহানবী (সা.) লাইলাতুল কদরের অন্বেষণে রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতেন। লাইলাতুল কদর বা সৌভাগ্য রজনী লাভ বোধ করি একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। সারা জীবন কঠোর সাধনা, ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে শয়তানী প্রবৃত্তিরূপে দৈত্যকে নিধন করার পর মুমিনের কাছে আসে সেই মুহূর্তটি-সেই পাওয়ার মুহ‚র্তটি যা আল কোরআনের সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ নামে আখ্যায়িত হয়েছে। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এ মুহূর্তটি।
লাইলাতুল কদর বলতে আমরা সাধারণত একটি রাতকে মনে করে থাকি। ভৌগলিক কারণে সারা দুনিয়ায় যেহেতু একই সময়ে রাত থাকে না সেজন্যে লাইলাতুল কদরকে আমাদের গণনার একটি রাত নির্ধারণ করা সঠিক বলে মনে হয় না। লাইলাতুল কদর এমন একটি সময় মুমিনের ব্যক্তিগত জীবন বা জাতীয় তথা মিল্লাতী জীবনে রাতের ন্যায় কাজ করে থাকে।
মুমিন সাধনার শেষ লগ্নে তার প্রভুর দিদার বা দর্শন ও সান্নিধ্য লাভ করে বাক্যালাপে ভ‚ষিত হয়। এ মুহূর্তটিই আসলে তার জীবনে লাইলাতুল কদর। তবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ মুহূর্তটি অবশ্যই মুমিনের জীবনে আসে রমজানের কঠোর সাধানার শেষ দশকে। রোজার সাধনার মাধ্যমে একজন মুমিন-মুত্তাকি বান্দা পানাহার ত্যাগ করে, নিদ্রাকে কম করে দিয়ে আল্লাহর স্মরণে সময় অতিবাহিত করে, যার প্রতিদান স্বরূপ সে এই সৌভাগ্য রজনী লাভে ধন্য হয়।
হজরত রাসুল করিম (সা.) এই রাতের নির্দিষ্ট কোন তারিখ উল্লেখ করেননি। শুধু রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে তালাশের নির্দেশনা দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) কদরের রাত্রি সম্বন্ধে বলেছেন ‘রমজান মাসের শেষের দশ রাত্রিসমূহে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর’ (বোখারি)।
আমাদেরকে এই শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের অন্বেষণ করতে হবে। তাই আসুন, রমজানের অবশিষ্ট দিনগুলোতে ইবাদতে আনি আমুল পরিবর্তন আর পুণ্যকাজের চেষ্টা সাধনা দ্বারা নিজকে কবুলিয়তে দোয়ার মোকামে উপনীত করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টায় রত হই। সকাতর প্রার্থনা করি দয়াময় প্রভুর দরবারে, তিনি যেন আমাদেরকে ক্ষমা করে নাজাত দান করেন, আমিন।
লেখক: ইসলামী গবেষক ও কলামিস্ট, ই-মেইল- masumon83@yahoo.com