রমজানের একেবারেই শেষ প্রান্তে আমরা রয়েছি। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে সবিনয় প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের রোজা কবুল করে নিয়ে আমাদেরকে তার দয়ার চাদরে আবৃত করে নেন আর বিশ্বকে সব বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন।
আমরা জানি, রমজানের দিনগুলোতে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ঝড়ো গতিতে দান খয়রাত করতেন। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন রমজানে দানখয়রাত করেন কিন্তু যে হারে করা প্রয়োজন সেভাবে হয়তো করেন না। এছাড়া শুধু রমজান মাস আসলেই হাতে গনা কিছু মানুষকে দেখা যায় জাকাতের কাপড় বিতরণ করতে, আর সারা বছর এমনটি চোখে পরে না।
আমরা যেভাবে নামাজ আদায় করাকে ফরজ জানি তেমনি জাকাত প্রদানও ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর একটি। পবিত্র কোরআন করিমে বিরাশি জায়গায় আল্লাহতায়ালা সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন। আর সবখানেই সালাতের সাথে সাথে জাকাত প্রদানের নির্দেশও দিয়েছেন। এটা অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যবহ বিষয়। সালাতের সাথে জাকাতের সম্পর্ক ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।
সংগতিসম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে জাকাত ব্যতীত সালাত কায়েম হওয়া সম্ভব নয়। মূলত সালাত ও জাকাত ব্যতীত ইসলামী জীবন গঠনই অসম্ভব। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা স্বর্ণ রৌপ্য মজুদ করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, হে নবি! তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তদ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ এবং পিঠকে সেক দেওয়া হবে (এবং তাদের বলা হবে) এটা তার প্রতিফল যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করেছিলে। সুতরাং তোমাদের ধনভাণ্ডারের শাস্তি আস্বাদন কর।’ (সুরা আত-তাওবা: আয়াত ৩৪-৩৫)
আসলে জাকাত সম্পদ ও ব্যক্তিকে পবিত্র করে। যেভাবে আল্লাহপাক বলেন, ‘তাদের মালামাল থেকে জাকাত গ্রহণ কর, যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগুলোকে বরকতময় করতে পার এর মাধ্যমে।’ (সুরা আত তাওবা: আয়াত ১০৩)
পৃথিবীর বুকে মানুষ যাতে সুখে শান্তিতে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারে তার জন্যই বান্দার দয়াময় আল্লাহতায়ালা জাকাতের ব্যবস্থা করেছেন। শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির নামই ইবাদত নয়। সংসারে জন্মগ্রহণ করে সংসারধর্ম রক্ষা করে, সত্য ও সঠিক পথে চলে মানব জীবনে প্রতিটি কর্মই ইবাদতের মধ্যে শামিল। হজরত নবী করিম (সা.) আজানের পর নিজ কক্ষ থেকে বের হয়ে মসজিদে আগমন করতেন এবং সমবেত মুসল্লিগণের সাথে বসতেন এবং উপস্থিত অনুপস্থিত প্রত্যেক মুসলিম ভাই বোনদের খবরাখবর নিতেন ও প্রত্যেকের জাগতিক সমস্যার সমাধান করতেন।
ইসলাম শুধু উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয় নাই। বাস্তব জীবনে জাকাতকে ফরজ কার্যের আওতায় এনে প্রতিফলন ঘটিয়েছে। জাকাত দ্বারা দরিদ্র জনসাধারণের জন্য একটি চিরস্থায়ী দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হজরত মহানবী (সা.) জাতীয় দৈন্য দুর্দশার মুক্তি সাধনায় বহু ত্যাগ স্বীকার করে তিনি বায়তুল মালকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনামলে মুসলমান জাতির প্রাণশক্তি ছিল বায়তুল মাল। তখন জাকাত আদায় করার জন্য আদায়কারী নিযুক্ত ছিল। তারা নিয়মিত জাকাত আদায় করে বায়তুল মালে জমা দিতেন এবং তা থেকে দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে যথাবিধি বণ্টন এবং ইসলামের প্রচার ও প্রসার কল্পে ব্যয়িত হতো।
আমরা জানি, সাহাবীগণের অধিক সংখ্যকই ছিলেন দরিদ্র ও অভাবী। নিজেদের ব্যবহারিক জীবনে তারা বহু অভাব অনটনে থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর পথে দ্বীনের কাজের জন্য বহুবিধ পথে তারা সম্পদ ব্যয় করতেন। এ সকল সাদাকাতের মধ্যে জাকাত ছিল অগ্রগণ্য ও সর্বব্যাপী।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।