কোরবানির ইতিহাস তাৎপর্য্য ও ফযিলত

, ইসলাম

মুফতি জাকারিয়া মাসউদ | 2023-09-01 23:36:41

কোরবানি মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মহৎ ইবাদত। ইসলামে কোরবানির অর্থ হলো, আল্লাহ তায়ালার সন্তষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের জন্য শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোন প্রিয় বস্তু আল্লাহ তায়ালার দরবারে পেশ করা এবং শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় তা ব্যবহার করা।

কোরবানির ইতিহাস: কোরবানি হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর যুগ থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। (সুরা মায়েদা আয়াত নং ২৭-৩১) এখানে আদম (আঃ) এর দুই সন্তানের ঝগড়া নিরসনের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নির্দেশিত কোরবানির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তি সকল নবীদের শরীয়তেই কোরবানির বিধান ছিল। তবে প্রত্যেক নবীদের সময়ে কোরবানির পন্থা ভিন্ন ছিল। (সুরা হজ্জ আয়াত ২২/৩৪) সবশেষে কেয়ামত পর্যন্ত সকল জাতি ও ভুখণ্ডের জন্য একই বিধান চলমান রয়েছে। যা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মাধ্যমে প্রাপ্ত শরীয়ত অর্থাৎ কুরআন সুন্নাহর বিধান। আর এই সময়ে আমাদের উপর যে কোরবানির পদ্ধতি চলমান তা হযরত ইবরাহিম আঃ এর শরীয়ত থেকে এসেছে। যেমনটি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলআইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে জানতে পারি যে, সাহাবারা প্রশ্ন করেছিলেন কোরবানি কি? ইয়া রাসুলুল্লাহ? তখন আল্লাহর রাসুল সাঃ উত্তর দিলেন ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আঃ) এর সুন্নাত ।(মিশকাত, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ) আমরা যে কোরবানি করি তা যে মহান রব আমাদেরকে দান করেছেন তাঁর খলিল হযরত ইবরাহিম আঃ এবং তদ্বয়ি পুত্র ইসমাইল আঃ এর মাঝে সংঘটিত কোরবানির পরিক্ষা থেকে তা সুরা আস ছফ্ফাতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে ( আয়াত নং ১০৫-১০৮)

কোরবানির তাৎপর্য্য বা গুরত্ব: কোরবানি হলো ইসলামের একটি শিয়ার এবং গুরত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল। কোরবানির দিনগুলিতে ( জিলহজ্জ মাসের ১০.১১.১২ তারিখ) যে ব্যক্তির নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত যাকাতের নেসাব পরিমান সম্পদ থাকবে তার জন্য একটি পশু কোরবানি করা ওয়াজিব। ওয়াজিব কোরবানি পরিত্যাগ কারীর উপর বিশ্বনবী (সাঃ) কঠিন সতর্কবার্তা পেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং পশু কোরবানি কর। ( সুরা কাউসার আয়াত ২) পবিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হে লোক সকল প্রত্যেক (সামর্থ্যবান) পরিবারের উপর কোরবানি দেয়া অপরিহার্য্য। (সুনান ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৩১২৫) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,যে ব্যাক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেবও কোরবানি করেনা সে যেন আমাদের ইদগাহে না আসে। ( মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৩১২৩)

কোরবানির ফযিলত: কোরবানি দাতা পশু কোরবানির মাধ্যমে হযরত ইবরাহিম (আঃ) ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি গুরত্ববহ ঐতিহাসিক সুন্নাত পালন করতে পারে। যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আর আমি মহা কোরবানির মাধ্যমে তাকে মুক্ত করেছি। ( সুরা আস-সাফফাত : আয়াত ১০৭) এছাড়াও বান্দা কোরবানির পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহর নিকট এসব পশুর রক্ত ও গোশত পৌছায় না, তাঁর নিকট পৌছে তোমাদের তাকওয়া। (সুরা হাজ্জ আয়াত : ৩৭) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন কোরবানির প্রবাহিত রক্ত আল্লাহ তায়ালার নিকট দুইটি কুচকুঁচে কালো ছাগলের চেয়ে প্রিয় ও পবিত্র। (বায়হাকী) অন্য হাদিসে তিনি বলেন, কোরবানির দিন পশু যবেহ (অর্থাৎ কোরবানি) ব্যতিত অন্য কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় নয়। (সুনানে তিরমিযি) তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি প্রফুল্ল চিত্তে কোরবানি করবে কেয়ামতের দিন জাহান্নাম ও ঐ ব্যক্তির মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাড়াবে। (আস সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী, তাবরানি) কোরবানির পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যায়। ( মেশকাত) এছাড়াও বহু ফযিলত কুরআন হাদিস দ্বারা প্রমানিত।

এখানে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করা হলো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিশুদ্ধ নিয়তে কোরবানি করার তৌফিক দান করুন। আমিন

লেখক: সাংবাদিক, ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

এ সম্পর্কিত আরও খবর