বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত হজ ও ওমরা পরিচালনার লাইসেন্সধারী এজেন্সির বাইরে থেকে যারা অন্যকোনো মাধ্যমে ভিসা নিয়ে ওমরা পালন করতে সৌদি আরবে যাচ্ছেন, তারাই ভোগান্তিতে পড়ছেন। পদে পদে পোহাতে হচ্ছে নানাবিধ বিড়ম্বনা।
ওমরা ভিসা ছাড়া বৈধভাবে অন্যকোনো ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে গেলেও করোনার ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট ও অ্যাপ-সংক্রান্ত জটিলতায় ওমরার আনুষ্ঠানিকতা পালনে বার কার বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
গত ১০ অক্টোবর সৌদিস্থ বাংলাদেশের কাউন্সেলর (হজ) অফিস থেকে বাংলাদেশ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। ওমরা পালনে সৌদিতে যাওয়ার আগে সেখানকার জটিলতা এড়াতে এ বিষয়ে বৈধ ওমরা এজেন্সির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন অনুসরণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
গত আগস্ট মাস থেকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে ওমরা পালনের অনুমতি দেয় সৌদি সরকার। সৌদি সরকারের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহির্বিশ্ব থেকে যেসব যাত্রী ওমরা পালন করতে সৌদি আরবে যাচ্ছেন তাদেরকে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণের সার্টিফিকেট সে দেশের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের সিস্টেমের সঙ্গে একটি অ্যাপসের সহায়তায় সমন্বয় করতে হয়। এটি ছাড়া ওমরার কোনো আনুষ্ঠানিকতাই কোনো ব্যক্তি পালন করতে পারবেন না। প্রত্যেক ওমরা যাত্রীকে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সৌদিতে আগমন ও অবস্থান সম্পর্কিত নিবন্ধন (Arrival Registation/Muqeem Registation) বাধ্যতামূলক। আর এই রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ‘তাওয়াক্কালা অ্যাপস’ (Tawakkalna apps) এবং ‘ইতামারনা অ্যাপস’ (Eatmarna apps) একটিভ করতে হয়।
সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশের কাউন্সেলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে ধর্ম সচিবকে আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে যারা ওমরা পালন করতে সৌদিতে যাবেন, তারা যদি বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত ওমরা এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করে প্যাকেজভিত্তিক (আবাসন, যাতায়াত, খাবার ইত্যাদি) চুক্তিতে আসেন তা হলে সেটি যাত্রীদের জন্যই সুবিধাজনক। এতে বাংলাদেশ থেকে সৌদিতে আসার পরপরই ওমরা পালনের সব সুবিধা পাওয়া যায়। বাড়তি কোনো জটিলতায় তাদেরকে পড়তে হয় না।
কেননা সৌদিস্থ সেখানকার ওমরা এজেন্সি অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে প্রত্যেক ওমরা পালনকারীর জন্যই একটি হাত বেল্ট সরবরাহ করে থাকে। আর এই হাত বেল্ট পরিহিতরাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে পবিত্র কাবা শরিফে ও মসজিদে নববিতে আদায়ের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া ওমরা পালনের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতাও নিদ্বির্ধায় ও কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়া সুচারূভাবে পালন করতে পারেন।
কাউন্সেলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলাম চিঠিতে আরও লিখেছেন, ওমরা এজেন্সির বাইরে যারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভিসা সংগ্রহ করে কিংবা অন্যকোনোভাবে বৈধভাবে ভিসা সংগ্রহ করে ওমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন তারাই বেশি জটিলতায় পড়ছেন। অনেকে লম্বা সময় অপেক্ষা করেও হাত বেল্ট সংগ্রহ করতে পারছেন না। আবার অনেকে পদে পদে নানা বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা কাউন্সেলর অফিসে যোগাযোগ করলেও তাদের অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুততার সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে পারছেন না। ফলে ওমরা যাত্রীকেই বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
চিঠির বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আমরা সৌদি আরবস্থ কাউন্সেলর (হজ) থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। সেখানে বলা হয়েছে যারা ওমরা ভিসা ছাড়া অন্যকোনো ভিসায় সৌদিতে গিয়ে ওমরা করতে চান, তারা ভোগান্তিতে পড়ছেন। বাংলাদেশ থেকে ওমরা ভিসা নিয়ে গেলে সৌদির লোকাল এজেন্সিগুলো বাংলাদেশ থেকে যাওয়া প্রত্যেক ওমরা যাত্রীর জন্য সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেন। এতে ওমরা যাত্রীরও কোনো ধরনের দুর্ভোগ বা কষ্ট করতে হয় না। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আমাদের কাছে এ বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমরাও সেভাবেই ওমরা যাত্রীদের উৎসাহিত করতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি।
এ বিষয়ে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানান, আমরা বরাবরই একটি বিষয় বলে আসছি যে, যারা মূলত ওমরা করতে সৌদি আরবে যাবেন; তারা যেন নিরেট ওমরার ভিসা নিয়েই সেখানে যান। কারণ এতে সুবিধা হলো, যখন বাংলাদেশ থেকে একজন ওমরার ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে যাবেন, তখন তিনি ওমরা পালনের যত আনুষ্ঠানিকতা বা সুযোগ-সুবিধা থাকবে তিনি (ওই যাত্রী) সবই নিয়মমতো যথাসময়ে পাবেন। সৌদির লোকাল ওমরা এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সেভাবেই বাংলাদেশের এজেন্সিগুলোর চুক্তি হয়ে থাকে। আর এর কোনো ব্যত্যয় হলে কোনো ওমরা যাত্রীই সঠিকভাবে ওমরা পালন করতে পারবেন না অথবা তাকে পদে পদে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হবে- এটিই স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, যে বা যারা ভিজিট ভিসা কিংবা ডিপ্লোমেটিক ভিসা অথবা অন্যকোনো ভিসা নিয়ে সৌদিতে গিয়ে ওমরা পালন করতে চাইবেন, তাদের সে ক্ষেত্রে নানা ধরনের জটিলতা ও ভোগান্তিতেও পড়তে হতে পারে। তাই যারা ওমরা করতে সৌদি আরবে যাবেন, তারা অবশ্যই যেন ওমরা ভিসা নিয়েই সেখানে যান।