নবী করিম (সা.) যেখানে প্রথম জুমা আদায় করেন

, ইসলাম

মাওলানা রহিমুল্লাহ শরীফ, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 22:39:21

ঐতিহাসিক মসজিদে জুমা। যেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদায় করেছিলেন সর্বপ্রথম জুমার নামাজ। মসজিদটি মদিনায় অবস্থিত।

হজরত রাসুলে কারিম (সা.) হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পথে কুবা নামক স্থানে চৌদ্দ দিন অবস্থান করেন। সেখানে তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ইসলামের সর্বপ্রথম এটাই সর্ব প্রধম মসজিদ।

ঐতিহাসিক এই মসজিদের নাম ‘মসজিদে কুবা।’ মসজিদটি মদিনা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে অবস্থিত। মসজিদের নববি থেকে এর দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটারের মতো।

নবী করিম (সা.) কুবা থেকে যেদিন মদিনার উদ্দেশে রওয়ানা হন, সেদিন ছিলো- জুমাবার। নবী করিম (সা.) মদিনার পথে কিছুদূর যাওয়ার পর বনি সালেম বিন আউফ মহল্লায় পৌঁছলে জোহরের ওয়াক্ত হয়, তখন তিনি সেখানে সাহাবাদের সঙ্গে নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। যাতে ১০০ জন মুসল্লি শরিক হন। এটাই ইতিহাসের প্রথম জুমার নামাজ।

barta24

পরবর্তীতে সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় এবং তার নাম রাখা হয় মসজিদে জুমা। নবী করিম (সা.)-এর স্মৃতিধন্য এই মসজিদের আরেক নাম হলো- ‘মসজিদে আতিকা।’ মসজিদটি কুবা মসজি থেকে ৯০০ মিটার উত্তরে এবং মসজিদে নববীর ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত।

হিজরতের সময় মদিনার পথে বনি সালেম গোত্রে আদায় করা জুমাই ইসলামের ইতিহাসে প্রথম জুমা। এই জুমায় নবী করিম (সা.) বেশ লম্বা খুৎবা দেন। এটাই ছিল ইসলামের ইতিহাসে সর্বপ্রথম জুমা ও সর্বপ্রথম জুমার খুৎবা।

অবশ্য ‘মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাকে’ সহিহ সনদে আল্লামা ইবনে সিরিন থেকে বর্ণিত আছে, দ্বিতীয় বাইয়াতে আকাবার পর যখন মদিনায় ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে, তখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমনের পূর্বে একবার আনসারগণ পরামর্শক্রমে একত্রিত হয়ে হজরত আসআদ বিন যুরারাহ (রা.)-এর কাছে গেলে তিনি জুমার দিন সবাইকে নিয়ে একত্রে জুমার নামাজ আদায় করেন।

মসজিদটি সর্বপ্রথম পাথুরে শিলা দ্বারা নির্মাণ করা হয়। পরে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়। সংস্কারের পূর্বে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮ মিটার, প্রস্থে সাড়ে চার মিটার এবং লম্বায় ৫.৫ মিটার। এবং একমাত্র গম্বুজটি ছিল লাল ইট দ্বারা নির্মিত। পূর্ব অংশের সাথে ৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থসহ একটি উঠান ছিল।

মসজিদের দ্বিতীয় সংস্কার উমাইয়া খলিফা দ্বিতীয় উমর। তৃতীয়বার সংস্কার করা হয় আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে ৭৩৪ থেকে ৭৪৮ সালের মধ্যে। চতুর্থ সংস্কার করেন চৌদ্দ শতকের সময় সায়ামসুদ্দিন কাওয়ান।

উসমানীয় সাম্রাজ্যের সময়ও একবার মসজিদটি সংস্কার করা হয়। এর নেতৃত্ব দেন সুলতান বায়েজিদ। আর ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি সংস্কার করেন সাইয়্যেদ হাসান আসি সিয়ারবাটলি।

সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজের নেতৃত্বে সৌদি সরকারের আওকাফ মন্ত্রণালয়ের পুরাতন মসজিদ ভেঙে নতুন নকশায় মসজিদটি নির্মাণ করেন।

নতুন নির্মাণে ইমাম এবং মোয়াজ্জিনের থাকার বাসভবন, একটি গ্রন্থাগার, একটি হিফজুল কোরআন মাদরাসা, নারীদের আলাদা নামাজের জায়গা এবং প্রয়োজনীয় বাথরুম ও অজুর ব্যবস্থা করা হয়।

মসজিদটিতে একসঙ্গে ৬৫০ জন মুসল্লি নামাজ আদায়া করতে পারেন। একটি উঁচু মিনার ও একটি প্রধান গম্বুজ এবং চারটি ছোট গম্বুজ নিয়ে নির্মিত মসজিদটি ১৯৯১ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর