শাহ ফয়সাল মসজিদ। অবস্থান পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে। মসজিদটি ইসলামাবাদের উত্তরে মনোহর মারগালা পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত। মারগালা হিমালায় পর্বতের অংশ। সম-সাময়িক ইসলামি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয় বেদুইন তাঁবুর আকৃতির এই মসজিদকে। সাধারণ মসজিদের প্রচলিত যে কাঠামো তার সঙ্গে এই মসজিদের ভেতর-বাইরের অবকাঠামোর তেমন মিল নেই। ফলে এই মসজিদকে ইসলামের আধুনিক স্থাপত্যের একক নমুনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশাহ ফয়সালের আর্থিক সহায়তায় ১৯৭৬ সালে নির্মাণ শুরু হয় মসজিদটির। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সফরের সময় তিনি এ মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে পাকিস্তানকে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর নির্মাণখরচ হয় ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি হিসেবে এক হাজার কোটি টাকার বেশি।
১৯৭৫ সালে বাদশা ফয়সাল নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার তার নামে নামকরণ করে এ মসজিদের। তখনও মসজিদ নির্মাণ শুরু না হলেও প্রকল্পের কার্যক্রম চলছিল।
আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এ মসজিদের নকশা নির্বাচন করা হয়। এর নকশাকার তুরস্কের স্থপতি ভেদাত ডালোকে।
গম্বুজবিহীন এই মসজিদের আটটি ঢালু ছাদ রয়েছে। মসজিদের দেয়াল থেকে শুরু করে ছাদ পর্যন্ত সূর্যের আলো প্রবেশের এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, মনে হয় সর্বত্র লাইট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মসজিদটি ইসলামাবাদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। যে মনোমুগ্ধকর মারগালা পর্বতের পাদদেশে এ মসজিদের অবস্থান সেটি পাকিস্তানের জাতীয় পার্ক।
মসজিদের তিন দিকে সবজু বনবেষ্টিত পাহাড় শ্রেণি। এক দিকে পরিকল্পিত সাজানো ইসলামাবাদ শহর। মসজিদের চার দিকে বিশাল খোলা চত্বর সবুজ বেষ্টনী দ্বারা চিহ্নিত। ওপর থেকে দেখলে সাজানো ছবির মতো মনে হয় মসজিদটিকে। মসজিদে যাওয়ার ফয়সাল অ্যাভিনিউর দুই পাশ মনোরম ফুলের গাছে সাজানো। এর মুসল্লি ধারণক্ষমতা কমপক্ষে ৭৪ হাজার। এর মধ্যে নামাজের মূল জায়গায় এক সঙ্গে ১০ হাজার, মসজিদের প্রবেশ পথের বর্ধিত অংশে ২৪ হাজার এবং মসজিদের সামনের অংশে ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে মসজিদের বাইরের খোলা চত্বরসহ পুরো মসজিদ কমপ্লেক্সে এক সঙ্গে আড়াই লাখের বেশি লোক জড়ো হতে পারে। বিভিন্ন দিবস ও উপলক্ষে এই পরিমাণ মানুষ অতীতে অনেকবারই জড়ো হয়েছে।
শাহ ফয়সাল মসজিদ পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং জাতীয় মসজিদ। এটি এক সময় পৃথিবীরও সবচেয়ে বড় মসজিদ ছিল এবং বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মসজিদ মুসল্লি ধারণক্ষমতার দিক দিয়ে। এর মিনারের উচ্চতা ২৬০ ফুট, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। মসজিদের চার দিকে সম উচ্চতার চারটি মিনার কাবার অদৃশ্য আকার নির্দেশ করছে। মসজিদের মিনারগুলো মিসাইল আকৃতির। মসজিদটি পাহাড়ের ঢালু পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় দিন-রাত সব সময় কয়েক মাইল দূর থেকে দেখা যায়।