সংসার-পরিবার আনন্দ উল্লাস ও সুখ-দু:খ ভাগাভাগির স্থান। পরিবার একজন ব্যক্তিকে তার নিজস্ব সমাজ ব্যবস্থার আচার-আচরণ ও মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমাদের ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিবারের গুরুত্ব অনেক বেশি।
এজন্য পরিবারের শান্তি, স্বচ্ছলতা, রহমত, বরকত ও কল্যাণের বিষয়টি সর্বাগ্রে বিবেচনায় রাখতে হয়। নামাজ এমনই একটি আমল ও ইবাদত যার মাধ্যমে পরিবারে কল্যাণ ও বরকত আসে। যে সব পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত নামাজ আদায় করে, আল্লাহর রহমত ঘিরে রাখে।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই ওই সব ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজ খুশু-খুজুর (একাগ্রতা) সঙ্গে আদায় করে।’ -সূরা মুমিনুন: ১-২
যে সব ঘরে নামাজ আদায় করা হয় না, ওই ঘরগুলোকে হাদিসের পরিভাষায় কবরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের ঘরেও নামাজ আদায় কর এবং ঘরকে কবরে পরিণত করো না।’ –সহিহ বোখারি: ৪২০
সাহাবি হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে (ফরজ) নামাজ আদায় করে, তখন তার উচিত নিজের ঘরের জন্য (সুন্নত ও নফল) নামাজের কিছু অংশ নির্দিষ্ট করা। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তার নামাজের কারণে তার ঘরে বরকত দান করবেন।’ –সহিহ মুসলিম: ২৬৫
হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ঘরে আল্লাহর আলোচনা হয় আর যে ঘরে হয় না তাদের উপমা যথাক্রমে জীবিত ও মৃত সদৃশ।’ –সহিহ মুসলিম: ২৬৫
সমাজের বহু পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি ও কলহ লেগে আছে। পরিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। পারিবারিক কলহ কিংবা যৌতুককে কেন্দ্র করে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা এখন নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়। যার ফলে পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হচ্ছে। সমাজের মূল্যবোধ নষ্ট হচ্ছে। পিতামাতার বিবাহ বিচ্ছেদের বিরূপ প্রভাব সন্তানের ওপর গিয়ে পড়ছে। যে সব সন্তানের পিতামাতার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে, সে সব সন্তানের বেড়ে উঠা কিংবা সুনাগরিক হয়ে উঠা অনেক দুরূহ ব্যাপার। পারিবারিক কলহ ঝগড়াঝাটি বা মারামরি করা মন্দ কাজ।
কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ -সূরা আনকাবুত: ৪৫
তাই, পরিবারে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে উদাসীনতা পরিহার করা খুবই জরুরি।
বহু পরিবার অভাব অনটন ও ঋণের বোঝায় জর্জরিত। অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব রয়েছে। নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির ওপর আল্লাহর রহমত নিকটবর্তী থাকে। তাই নামাজি ব্যক্তির ব্যবসায়িক মন্দাভাব সহজে দূর হয়ে যায়। আল্লাহতায়ালা নামাজি ব্যক্তিকে সকল প্রকার আজাব-গজবের হাত থেকে রক্ষা করেন।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব (কোরআন) তেলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দান করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনও ধ্বংস হবে না।’ -সূরা ফাতির: ২৯
আল্লাহতায়ালা সবাইকে ফরজ নামাজ ব্যতিত সুন্নত ও নফল নামাজ ঘরের আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।