অনর্থক কথা বলায় যেসব ক্ষতি হয়

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

হাফেজ তাওসীফ আহমাদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 22:23:32

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া শিক্ষা আমাদের জন্য সদা বিদ্যমান কল্যাণের উদ্যান। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতিটি কথাই মানবজাতির জন্য কল্যাণময়। তিনি এক হাদিসে ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি চুপ থাকে, সে নাজাত পায়।’ –তিরমিজি : ২৫০১

চুপ থাকা একটি পরিশ্রমবিহীন ইবাদত। আজ মানুষ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথা অমান্য করার কারণে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। হজরত আবু মূসা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম মুসলিম কে? তিনি বললেন, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।’ –সহিহ বোখারি : ১১

এখন মানুষ একজন আরেকজনের জবান থেকে নিরাপদ থাকাতো দূরের কথা, উল্টো সর্বদা ভয়ে থাকতে হয়, কখন না আবার অন্যের কথা কথার বদলায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তাঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। -সহিহ বোখারি : ৬৪৭৪

বর্ণিত হাদিসের শিক্ষার বিষয়ে সব মুসলমানের সচেতন থাকা চাই। এখানে রয়েছে শিক্ষণীয় অনেক বিষয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দা আল্লাহতায়ালার সন্তোষজনক এমন কথা অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেলে, যার ফলে আল্লাহ তার মর্যাদা উন্নীত করে দেন। আবার কখনও বান্দা অন্যমনস্ক হয়ে আল্লাহর অসন্তোষজনক এমন কথা বলে ফেলে, যার ফলে সে জাহান্নামে গিয়ে পতিত হয়।’ –সহিহ বোখারি : ৬৪৭৮

সাবধান! আপনি এমন কোনো কথা বলবেন না, যেটা মহান আল্লাহর কাছে অসন্তোষজনক হয়ে দাঁড়ায়। কিছু মানুষ আছে, যারা শুধুমাত্র মানুষকে খুশি করার জন্য নানা রকম মুখরোচক কথা বলে। মনে যা চায়, সেটাই মানুষের সামনে উপস্থাপনা করে। হোক সেটা আল্লাহর কাছে সন্তুষ্টির কথা কিংবা অসন্তুষ্টির কথা। এমন অভ্যাস নিন্দনীয়।

যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে; না হলে চুপ থাকে 

হজরত উবাদা বিন সামেত (রা.) বলেন, একদা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ারিতে সওয়ার হয়ে কোথাও বের হলেন। সঙ্গে ও সামনে ছিলেন তার সাহাবিরা। হজরত মুআয বিন জাবাল (রা.) তার উদ্দেশ্যে বলেন, হে আল্লাহর নবী! খুশি মনে আমাকে অগ্রণী হয়ে বলতে অনুমতি দেবেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর মুআয (রা.) তার নিকটবর্তী হলেন। সকলে চলতে শুরু করলে হজরত মুআয বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক- আমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, আপনার থেকে আমাদের (মৃত্যুর) দিন আগে করুন। যদি কিছু হয়ে যায়, আর ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না। আপনার পরে আমরা কোন কাজগুলো করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। মুআয (রা.) বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ? অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জিহাদ খুব উত্তম জিনিস। কিন্তু এর চেয়ে সহজ জিনিস আছে। মুআয বললেন, তাহলে রোজা ও সদকা? নবী করিম (সা.) বললেন, রোজা ও সদকা উত্তম জিনিস। অতঃপর মুআয মানুষের প্রায় সকল সৎকর্মের কথা উল্লেখ করলেন। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বার বারই বললেন, এর চেয়েও উত্তম কর্ম আছে। অবশেষে মুআয বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এর চেয়ে উত্তম আর আছে কি? তদুত্তরে তিনি নিজ মুখের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, মঙ্গল ব্যতীত অন্য বিষয়ে চুপ থাকা। মুআয বললেন, আমরা জিবে যে কথা বলি, তাতেও কি আমাদেরকে কৈফিয়ত করা হবে? তা শুনে তিনি মুআযের জানুতে চপেটাঘাত করে বললেন, হে মুআয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষের জিভে বলা কথা ছাড়া অন্য কিছু কি তাদেরকে নাক ছেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে? সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যক্তির উচিত। উত্তম কথা বলা নতুবা মন্দ বলা হতে চুপ থাকা। তোমরা উত্তম বলো, লাভবান হবে এবং মন্দ বলা হতে চুপ থাকো, নিরাপত্তা লাভ করবে। -হাকেম : ৭৭৭৪

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আদম সন্তান যখন সকালে উপনীত হয়, তখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিভকে অত্যন্ত বিনীতভাবে নিবেদন করে যে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কারণ, আমাদের ব্যাপারসমূহ তোমার সঙ্গেই সম্পৃক্ত। যদি তুমি সোজা সরল থাকো। তাহলে আমরাও সোজা-সরল থাকব। আর যদি তুমি বক্রতা অবলম্বন করো, তাহলে আমরাও বেঁকে বসব।’ –তিরমিজি : ২৪০৭

আপনি যদি গোনাহ থেকে বিরত থাকতে চান, তাহলে ঘুম থেকে উঠা নিয়ে রাতে ঘুমানো পর্যন্ত আপনার জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ রাখুন। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন ইরশাদ করেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।’ -সুরা ক্বাফ : ১৮

কথাগুলো জেনে রাখা দরকার, যে কথায় উপকার আছে বলে স্পষ্ট হয়, সে কথা ছাড়া অন্যসব কথা হতে জিহ্বাকে সংযত রাখা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জরুরি। যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা দু’টোই সমান, সেখানে চুপ থাকাটাই সুন্নত। কেননা, বৈধ কথাবার্তাও অনেক সময় হারাম অথবা মাকরূহ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। অধিকাংশ এরূপই ঘটে থাকে। আর (বিপদ ও পাপ থেকে) নিরাপত্তার সমতুল্য কোনো বস্তু নেই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর