কোরআনে কারিম মানবজাতির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। প্রত্যেক নবী ও রাসুলকে আল্লাহতায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য কিতাব দান করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করা হয় কোরআন মাজিদ। সৃষ্টিকূলের ওপর যেমন স্রষ্টার সম্মান ও মর্যাদা অপরিসীম, তেমনি সব বাণীর ওপর পবিত্র কোরআনের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অতুলনীয়।
মানুষের মুখ থেকে যা উচ্চারিত হয়, তার মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত সর্বাধিক উত্তম। কোরআনে কারিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পঠিত পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত ও শিক্ষার অনেক গুরুত্ব অনেক। কোরআনের আয়াত ও হাদিসের একাধিক জায়গায় এর ফজিলতের কথা আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে বর্ণনা করা হলো-
কোরআন তেলাওয়াত একটি লাভজনক ব্যবসা
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত আল্লাহর সঙ্গে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দু’টিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোনো প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা নেই। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনও লোকসান হবে না।’
পরবর্তী আয়াতে আরও বলা হয়েছে, ‘পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ -সুরা ফাতির : ২৯-৩০
প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ
কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সঙ্গে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’ -তিরমিজি : ২৯১০
কোরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি
পবিত্র কোরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। হজরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই, যে নিজে কোরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।’ -সহিহ বোখারি : ৫০২৭
কোরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে
কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার সময় কোরআন তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে। এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কোরআন তেলাওয়াত করো, কারণ, কোরআন কেয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে।’ -সহিহ মুসলিম : ১৯১০
কোরআন পড়া উত্তম সম্পদ অর্জন
কোরআন পড়া বা শিক্ষা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কোরআন হতে দু’টি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না?
তাহলে সেটি তার জন্য দু’টি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়ত চার উট অপেক্ষা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম। -সহিহ মুসলিম : ১৩৩৬
কোরআন তেলাওয়াত ঈমান বাড়ায়
পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত বান্দার জন্য এমন উপকারী যে, তা তেলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ারদেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে।’ -সুরা আনফাল : ২
কোরআনের ধারক-বাহক ঈর্ষণীয় ব্যক্তি
কোনো ব্যক্তি পবিত্র কোরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তেলাওয়াত করলে তার সঙ্গে ঈর্ষা কিংবা তার মতো হওয়ার আকাঙ্খা করা যাবে।
ইসলামি শরিয়তে একমাত্র দুই ব্যক্তির ওপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহতায়ালা কোরআনের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ওই কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে তা দিনরাত (বৈধ কাজে) খরচ করে। -সহিহ বোখারি : ৭৫২৯