জনপ্রিয় কিছু ইসলামি পর্যটনকেন্দ্র

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মাহফুজ বিন ফারুক, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 20:05:23

বৈচিত্র্যময় এই পৃথিবীতে আছে ঐতিহাসিক, রহস্যঘেরা ও নয়নাভিরাম বহু স্থান। যা দেখতে ছুটে যায় পৃথিবীর নানা প্রান্তের পর্যটকরা। মুসলিম বিশ্বের এমন জনপ্রিয় সাতটি পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করা হলো।

নকশে ময়দানে জাহান
ইরানের ইস্পাহানে অবস্থিত নকশে ময়দানে জাহানের অন্য নাম ইমাম স্কয়ার। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইসলামি পর্যটনকেন্দ্র। হাজার বছরের প্রাচীন ও মুসলিম সভ্যতার অন্যতম ধারক এই শহরকে পৃথিবীর অর্ধেক সৌন্দর্য বলা হয়। ১৫৯৮ সালে শাহ আব্বাস তার সাম্রাজ্যের রাজধানী উত্তর-পশ্চিম শহর কাজিন থেকে ইস্পাহানে স্থানান্তরিত করার সময় পারস্যের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে এই কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু করেন। ঐতিহাসিক এই দৃষ্টিনন্দন স্থানটি ইসলামিক স্থাপত্য সমাহারে বেষ্টিত। এর বিশেষ আকর্ষণ নীল আর হলুদ রঙের কারুকাজখচিত টাইলস। স্কয়ারটি এক হাজার ৮৪০ ফুট দীর্ঘ ও ৫২০ ফুট প্রস্থ। ৯ লাখ ৬৪ হাজার স্কয়ার ফিটের বিশাল জায়গার চারপাশে আকর্ষণীয় দালান ও মাঝখানে কৃত্রিম ঝরনা।

ইরানের ইস্পাহানে অবস্থিত নকশে ময়দানে জাহানের অন্য নাম ইমাম স্কয়ার



জালুলু হাম্মাম
তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ইস্তাম্বুলের জালুলু হাম্মাম। হাম্মাম অর্থ গোসলখানা। এই তুর্কি গোসলখানায় পর্যটকদের ঐতিহ্য ও আধুনিক পদ্ধতির সমন্বয়ে গোসল করানো হয়। নেওয়া হয় বিশেষ যত্ন। হাউসটি ১৭৪১ সালে নির্মিত। তুর্কি আদালতের স্থপতি ঐতিহাসিক হাম্মামখানার নকশা করেছিলেন। এখানে ইস্তাম্বুলের বৃহত্তম স্প্লাশিং ঝরনা ও হালকা ফিল্টারিং গম্বুজ রয়েছে। বাথহাউসগুলো গম্বুজযুক্ত। অষ্টভুজাকার রুম কেন্দ্র করে তা নির্মাণ করা হয়েছে। তুর্কি হাম্মামে গোসল করতে হলে পর্যটকদের গুনতে হয় ৭০ ডলার।

মুসলিম কোয়ার্টার
চীনের জিয়ানে অবস্থিত মুসলিম কোয়ার্টার। এখানে আছে চীনের মুসলিম হুই গোত্রের প্রাচীন বাড়ি-ঘর ও মসজিদ। জিয়ানে ৭০ হাজারের মতো হুই মুসলিম বসবাস করে। মুসলিম কোয়ার্টারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ আঠারো শতকে নির্মিত গ্রান্ড মসজিদ, যা চীনা শৈলীতে নির্মিত। এ ছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বাণিজ্যিক কারণে মুসলিম কোয়ার্টার বেশ জনপ্রিয়। বিশেষত মুসলিম কোয়ার্টার স্ট্রিট ফুড ও রেস্তোরাঁগুলো পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়।

তুরস্কের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ইস্তাম্বুলের জালুলু হাম্মাম



আলহামরা
স্পেনের গ্রানাডায় অবস্থিত আমহামরা মুসলিম স্পেনে সর্বশ্রেষ্ঠ স্মৃতিস্তম্ভ। গ্রানাডার শহরের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের আসসাবিকা পাহাড়ের ওপর অবস্থিত এই রাজপ্রাসাদ নবম শতাব্দীর শেষভাগে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত রোমান দুর্গের ভিতের ওপর নির্মিত হয়। তবে প্রাসাদ ও সংলগ্ন অন্য অংশ ১৩ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে সম্পন্ন হয়। আলহামরা প্রাসাদটি নাসরি রাজবংশের শাসনকালে তৈরি, যা তাদের বাসস্থান ও রাজসভা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রাজা ফার্ডিন্যান্ড ও রানি ইসাবেলা স্পেন জয়ের পর আলহামরাকে তাদের রাজপ্রাসাদ হিসেবে ব্যবহার করেন। এ প্রাসাদের সংলগ্ন করিডোর, যা পুকুর থেকে শুরু হয়ে মার্টল কোর্টে গিয়ে সংযুক্ত হয়েছে এবং চারপাশে জলাধার পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রাসাদটি ৪২ মিটার লম্বা এবং ২২ মিটার প্রশস্ত।

আরব স্ট্রিট
সিঙ্গাপুরের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর অন্যতম আরব স্ট্রিট। এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। ব্রিটিশ-মোগল নকশায় আইরিশদের নির্মিত সুলতান মসজিদ এখানে অবস্থিত। যার চারপাশে তৈরি হয়েছে মুসলিম ব্যবসাকেন্দ্র। রেস্তোরাঁয় আরবিয় খাবার, পার্সিয়ান কার্পেট, জায়নামাজ, চামড়া ও বুটিকের জুতা, চন্দনকাঠের সুগন্ধির জন্য বিখ্যাত আরব স্ট্রিট। রমজান মাসে এখানে কেক, বারবিকিউড মুরগি এবং ভারতীয় খাবারও পাওয়া যায়।

চীনের জিয়ানে অবস্থিত মুসলিম কোয়ার্টার



আরব ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট
ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত আরব ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট। ১৯৮০ সালে ফ্রান্স ও ১৮টি আরব দেশ যৌথভাবে প্যারিসে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত করে। ফ্রান্সে আরব সভ্যতা ও সংস্কৃতি তুলে ধরাই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। আরব সভ্যতা, শিল্প, জ্ঞান ও নান্দনিকতার প্রচারের জন্য একটি জাদুঘর, গ্রন্থাগার, মিলনায়তন, রেস্তোরাঁ, অফিস ও সভাঘর নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরটি আরব ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক নিদর্শন দিয়ে সাজানো। পাশাপাশি সমসাময়িক আরব শিল্প থেকে আরব-আফ্রিকান ইসলামি সংস্কৃতির বহু নিদর্শন এখানে স্থান পেয়েছে। আরব ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট প্যারিসের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র।

কায়রো
প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিসরের রাজধানী কায়রো ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র। এখানে ইসলামি সভ্যতার বহু নিদর্শন রয়েছে। শহরজুড়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপনা, মসজিদ ও মাদরাসা। কায়রো জাদুঘরগুলোতেও আছে ইসলামের ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন। কায়রোর জনপ্রিয় ইসলামি পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে আছে মিসরীয় জাদুঘর, ইসলামি আর্ট জাদুঘর, আল আজহার মসজিদ, আহমাদ ইবনে তুলুন মসজিদ, সুলতান হাসান মসজিদ, আল আজহার পার্ক, তাহরির স্কয়ার, খান এল খলিল মার্কেট, দ্য সিটাডেল, গেজারিয়া ইত্যাদি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর