সুনামগঞ্জের হিজড়া সমাজ তথা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রথম বারের মতো চালু করা হয়েছে মাদ্রাসা। এখানে সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন শেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার নানাবিধ শিক্ষা পাবেন সমাজের অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা
রোববার (৯ জানুয়ারি) বিকালে শহরের কাজীর পয়েন্ট এলাকায় এই মাদ্রাসার উদ্বোধন করেন পৌরসভার মেয়র নাদের বখত।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। দাওয়াতুল কোরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা নামে এই মাদ্রাসা জেলার চারশর বেশি সুবিধাবঞ্চিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে বিভিন্ন ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হবে।
তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থী সামরাজ আহমদ প্রিয়াঙ্কা জানান, ‘তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ায় তিনি কোথাও ধর্মীয় শিক্ষা নিতে পারেননি। এই মাদ্রাসা থেকে তার শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো।’
তৃতীয় লিঙ্গের অপর শিক্ষার্থী আঁখি আক্তার বলেন, ‘হিজড়ারা মারা গেলে জানাজার নামাজ পড়ানোর মানুষ পাওয়া যায় না। কোনও ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া যায় না। হিজড়ারাও মানুষ। তাদেরও সমাজে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।’
তৃতীয় লিঙ্গের আব্দুল খালেক বলেন, ‘অধিকাংশ হিজড়া নামাজ-কালাম পড়তে পারেন না। মাদ্রাসাটি চালু হওয়ার কারণে তারা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।’
দাওয়াতুল কোরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি মুহাম্মদ আবদুর রহমান আজাদ জানান, সুবিধাবঞ্চিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ধর্মীয় শিক্ষা দিতে তাদের এই আয়োজন।
হিজরা কল্যাণ সংস্থা সিলেট বিভাগের সভাপতি সুমনা আক্তার কালা হিজরা বলেন, ‘আগে হিজড়ারা নামাজ-কালাম পড়ার সুযোগ পেতেন না। এখন তারা সেই সুযোগ পাবেন।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’ই প্রথম কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠিত। যা ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা, নামাজ প্রশিক্ষণ, দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের তালিমগুলো হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ও বিভাগীয় শহরগুলোতে দাওয়াতুল কোরআনের উদ্যোগে বেশ কিছু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে ওইসব এলাকার হিজড়াদের জীবনমানে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি কমেছে তাদের অপরাধ প্রবণতা।