ওয়াজ মাহফিল- কৃষক, দিনমজুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্য সংক্ষিপ্ত পরিসরের একটি পাঠশালা। সেখানে শেখানো হয়, নামাজ কীভাবে পড়তে হয়? বলা হয়, নামাজ পড়ার ফজিলত, নামাজ না পড়ার ভয়াবহ শাস্তি। বয়ান করা হয়- দেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে ও অবস্থা নিয়ে। সেই পাঠশালা থেকে মানুষ তার প্রয়োজনীয় ইলম (জ্ঞান) হাসিল করে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার পক্ষ হতে একটি হাদিস হলেও মানুষের কাছে পৌঁছে দাও।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৬৬৯
এই হাদিসের ওপর আমলের বেশি সুবিধা হয় ওয়াজ মাহফিল ও তাবলিগের মাধ্যমে। না হয় একজন একজন করে রাসুলের বাণী সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া অসম্ভব। ওয়াজ মাহফিলে মানুষের জমায়েত হয়, কৃষক, দিনমজুররাও উপস্থিত হয়, ফলে বক্তারা কথা বলতে আনন্দ পায়, মন খুলে কথা বলে। যার নিমিত্তে শ্রোতারাও আনন্দচিত্তে, খুশিমনে বক্তার নসিহত শ্রবণ ও আমল করার চেষ্টা করে।
নবী কারিম (সা.)-এর যুগেও সাহাবারা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কে ঘিরে বসে নসিহত শ্রবণ করত। যুগে যুগে এভাবে হয়ে আমাদের পর্যন্ত এসেছে। আয়োজনের ক্ষেত্রে ভিন্নতা ঘটেছে তবে কথা কোরআন ও হাদিসেরই। তখন খোলা আকাশের নীচে, গাছের নীচে সবাই বসতেন। এখন মানুষের সুবিধার্থে প্যান্ডেল, স্টেজ করা হয়। মাইকের ব্যবস্থা করা হয়।
সুস্থ-সমাজ গঠনে ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, সেখানে বলা হয়, কীভাবে একটি সুস্থ, ইসলামি সমাজ গঠন করা যায়! ওয়াজ মাহফিল নিয়ে আসে ব্যক্তিজীবনের পরিবর্তন। যখন সাহাবা, অলি-আউলিয়াদের কথা বলা হয়, তখন নিজের মধ্যে একটা পরিবর্তন চলে আসে। নিজের জীবনেকে তাদের মতো করে গড়ার চেষ্টা করে।
ওয়াজ মাহফিল, ইসলামের ওপর চলার আগ্রহ বাড়ায়, ইসলামের ওপর চলতে সাহায্য করে। যখন ওয়াজে নামাজের ফজিলত, না পড়ার ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়, মেসওয়াক করার ফজিলত ও ফায়দার কথা বলা হয়, যখন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণের কথা বলা হয়, তখন ইসলামের ওপর চলার আগ্রহী হয়। কারণ, একজন পাগলও তার লাভ-লোকসান বুঝে। সেখানে একজন সুস্থ-মস্তিষ্কের মানুষ কেন বোঝবে না যে, এই কাজটি করলে তার লাভ (জান্নাত) হবে, না করলে লোকসান (জাহান্নাম) হবে।
ওয়াজ মাহফিলে আল্লাহর কথা, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথা বলা হয়। যেখানে কোরআন-হাদিস নিয়ে আলোচনা হয় আল্লাহর রহমত নাজিল হয়। রহমতের ফেরেশতারা বেষ্টন করে রাখে।
ওয়াজ মাহফিল দ্বারা আমলে তেজ আসে। একটি বটিকে যদি ঘরে ফেলে রাখা হয়, সেটি ভোঁতা হয়ে যায়। ফেলে না রেখে কাজে লাগানো যায়, তাহলে তেজ বহাল থাকে। ঠিক তেমনি যত বেশি ওয়াজ মাহফিল হবে, সেখানে যত বেশি আমলের কথা বলা হবে, আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হবে, আমলের ফজিলতের কথা বলা হবে, ফলে আমলের তেজ থাকবে। যদি আমলের কথা বলা না হয় কিংবা শোনা না হয়, তাহলে আমলে অনীহা চলে আসবে, আস্তে আস্তে আমল ছেড়ে দেবে।
ওয়াজ মাহফিল দ্বারা কম বেশি সবাই সওয়াবের ভাগীদার হয়। মাহফিলে আমলের কথা শুনে কেউ যদি একটি আমল করে, যে আমল করল সে তো সওয়াব পাবে, যিনি এই আমলের কথা বললেন তিনিও সওয়াব পাবেন, যারা মাহফিলের আয়োজন করেছেন তারাও সওয়াবের ভাগীদার হবেন।
আমরা অনেকে বলে থাকি, এত এত ওয়াজ, মাহফিল হচ্ছে; কিন্তু কয়জন মানুষ হেদায়েত হচ্ছে? এক এলাকায় একটি মাহফিলই যথেষ্ট। এত ওয়াজ দিয়ে লাভ কী? এ ধরণের কথা যারা বলেন, তারা আজ থেকে এ কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। কেননা হেদায়েতের মালিক আল্লাহতায়ালা। তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন, যাকে ইচ্ছা দেন না। এই ব্যাপারে কোনো মানুষের প্রশ্ন ওঠানো অযৌক্তিক। আল্লাহতায়ালা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলেন, আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে হেদায়েত দিতে পারবেন না, তবে আল্লাহতায়ালাই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেন। কে সৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন। -সুরা কাসাস ৫৬
যেখানে স্বয়ং রাসুলকে এই ক্ষমতা দেননি যে, যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেবে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু সৎপথের দিকে আহবান করতে পারবেন। অন্য আয়াতে বলেন, ‘আপনি উপদেশ দিন। কেননা, উপদেশ বিশ্বাসীদের উপকারে আসে।’ -সুরা আয-যারিয়াত : ৫৫
আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-কে উপদেশ দিতে বলছেন। হেদায়েতের মালিক আল্লাহ! তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দেবেন। আমাদের এতে মাথাব্যথা কেন? আলেমদের কাজ হলো- হক-বাতিল, হালাল-হারামের কথা বলে যাওয়া। যথাযথভাবে ইসলামের বিধান, কোরআন ও হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা মানুষের সামনে তুলে ধরা। মানুষকে উপদেশ দেওয়া। যে গ্রহণ করলো সে লাভবান হলো, যে গ্রহণ করলো না তার ক্ষতি হলো।