রমজান মাস হোক সুস্বাস্থ্যময়

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 16:04:37

রমজান মাসে রোজা রাখার ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। আমরা সাধারণত সারা বছর যেসব খাবার খাই, তার অধিকাংশ বের হয়ে গেলেও কিছু অংশ জমা হয়ে থাকে শরীরে, যা নীরব ঘাতক হিসেবে ক্ষতি করতে থাকে শরীরের। রোজার ফলে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর কোষগুলো ধ্বংস হয়, যা শরীরকে নতুন রুপ দান করে এবং এনে দেয় সতেজতা। রোজার ফলে শরীরের কোলেস্টরলের মাত্রাও কমে দারুণভাবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের কার্ডিওলজিস্টরা এক সমীক্ষার মাধ্যমে দেখতে পান, রোজাপালনের ফলে লিপিড প্রোফাইলে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টরলে ভুগছেন এমন রোগীদের রক্তে কোলেস্টরল দ্রুত কমতে শুরু করে।

কম কোলেস্টরল কার্ডিওভাস্কুলার স্বাস্থ্য বাড়ায়, হৃদরোগ, হার্টঅ্যাটাক বা কিংবা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। রমজানের পরও যদি আপনি একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট তালিকা অনুসরণ করেন, তাহলে কোলেস্টরলের মাত্রা একেবারে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কে নতুন কোষ গঠেনে সাহায্য করে ফাস্টিং। ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার উন্নতি ঘটে। একইভাবে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত হরমোন কর্টিসলের পরিমাণ কমার কারণে মানসিক চাপ কমে।

রমজান মাসে আমরা বিভিন্ন ধরনের বাজে চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকি, যা আমাদের মানসিক প্রশান্তিতে কাজে দেয়। রমজান মাসকে আমরা অনুশীলনের মাস হিসেবে গণ্য করতে পারি, কারণ রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়, আত্মসংযম, একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ এবং বিভিন্ন বাজে অভ্যাস পরিত্যাগের। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বাধার সৃষ্টি করে। কিন্তু আমরা যদি এই রমজান থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী ১১ মাস জীবনে তা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে জীবন হয়ে উঠবে আরও উপভোগ্য, হাসোজ্জ্বল ও আনন্দময়।

কিন্তু বাঙালিরা এই সংযমের মাসকে ভোগের মাসে পরিণত করেছে। অনেক সময় দেখা যায়, রমজান মাসে ওজন কমার বিপরীতে বেড়ে যায়, এর কারণ মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ। অথচ রমজানের বিধান দেওয়া হয়েছে মানুষের কষ্ট অনুধাবনের জন্য। নানা পদের তেলেভাজা চর্বিযুক্ত ফাস্টফুড দিয়ে সাজানো ইফতারের পসরা, যা দেখতে লোভনীয় আবার মুখোরোচকও বটে। কিন্তু আমাদের উচিত ছিলো স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রেখে পুষ্টিকর ও উপকারী খাবার গ্রহণ করা।

রমজানে দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। তাই ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে অন্তত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত। অনেকে পানির পরিবর্তে লেমন অথবা বিভিন্ন প্রকারের শরবত, ভিটামিন ওয়াটারসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত পানীয় পান করেন। এ বিষয়ে পুষ্টিবিদদের অভিমত, রোজাদারদের শুধু বিশুদ্ধ পানি পান করা ভালো। কার্বোনেটেড ও সুগার ড্রিংক, চা ও কফি পান করলে শরীর থেকে অধিক পানি বের হয়ে যায়। তাই কার্বোনেটেড, বেভারেজ ও সুগার ড্রিংক বা নানা ধরনের শরবত পরিহার করা উচিত।

স্বাস্থ্যবান রোজাদারের জন্য ইফতারিতে খেজুর, ঘরের তৈরি বিশুদ্ধ শরবত, শসা, পেঁয়াজি, ছোলা বুট, ফরমালিন অথবা ক্যালসিয়াম কার্বাইডমুক্ত মৌসুমি ফল থাকা ভালো। ফলমূলে ভিটামিন ও মিনারেল থাকায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং সহজে তা হজম হয়। রুচি অনুযায়ী বাসার রান্না করা নুডুলসও খেতে পারেন ইফতারে। তবে তেহারি, হালিম না খাওয়াই ভালো।

এ ছাড়া ইফতারে আমরা খেতে পারি বিভিন্ন ফলমূল বা তরমুজ যা পানি ঘাটতি পূরণ করে। এছাড়া পেয়ারা, কমলা বা মাল্টা, যা জুস করেও খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের দেশীয় ফল।

এশা ও তারাবির নামাজের পর অভ্যাস অনুযায়ী পরিমাণমতো ভাত, মাছ অথবা মুরগির গোশত, ডাল ও সবজি খাবেন। ভাতের সঙ্গে মিশ্র সবজি, মাছ অথবা গোশত খেতে পারেন। এর পর হালকা ঘুমের পর সময় হয় সাহরির। সারাদিন না খেয়ে থাকতে হবে বলে, অনেকেই সাহরিতে অতিরিক্ত খাবার খান। এটা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, চার-পাঁচ ঘণ্টা পার হলেই খাদ্যগুলো পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে গিয়ে হজম হয়। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি না খাওয়াই ভালো। বরং মাত্রাতিরিক্ত খেলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

রমজানে দীর্ঘসময় অভুক্ত থাকায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ঘুমানোর আগে ও সাহরির পরে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে ভুলবেন না। রোজা রাখা অবস্থায় সকালে ব্যায়াম না করে ইফতারের পর ব্যায়াম করতে পারেন। খাওয়ার আগে অবশ্যই হাত পরিস্কার করে ধুয়ে নেবেন। দিনে গরমের সময়ে ঠান্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা চেষ্টা করুন। আশা করা যায়, এর মাধ্যমে রোজা হবে আপনার জন্য স্বাস্থ্যময়। ইবাদতও পালন হবে শরীরে কোনো কষ্টও হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর