রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের লাভ

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 16:05:21

পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকে আমরা অবস্থান করছি। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে- রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। হাতে যে কয়টি দিন আছে তা কাজে লাগানো। সুতরাং আর যে কয়দিন বাকী আছে তাতে আমরা কোরআন মাজিদ বেশি বেশি তেলাওয়াত করব। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমে এক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরআন মাজিদে দক্ষ ও পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ সম্মানিত পুণ্যবান ফেরেশতাদের সঙ্গে থাকবেন। যে ব্যক্তি কোরআন আটকে আটকে তেলাওয়াত করে এবং তা তার জন্য কষ্টকর হয়, তার জন্য দুইটি প্রতিদান রয়েছে।’ -সহিহ বোখারি : ৪৯৩৭

দুইটি প্রতিদানের প্রথমটি হলো- তেলাওয়াতের, দ্বিতীয়টি হলো- পাঠকারীর কষ্টের। অনুরূপভাবে সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আবু মুসা আল আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন কোরআন তেলাওয়াত করে তার দৃষ্টান্ত কমলালেবুর মতো, যা সুস্বাদু ও সুঘ্রাণযুক্ত। আর যে মুমিন কোরআন তেলাওয়াত করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায় যার কোনো ঘ্রাণ নেই কিন্তু তার স্বাদ মিষ্টি।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪২৭

সহিহ মুসলিমে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই নবী কারিম (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) লোকজন একত্রিত হয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে এবং নিজেদের মাঝে তা অধ্যয়ন করে, তখন তাদের ওপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, আল্লাহর রহমত তাদেরকে আবৃত করে রাখে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখেন এবং আল্লাহ তার কাছে অবস্থিত ফেরেশতাদের কাছে তাদের আলোচনা করেন।’ -সহিহ মুসলিম : ২৬৯৯

কোরআন তেলাওয়াতে প্রতিটি হরফে নেকি রয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ (অক্ষর) পাঠ করবে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হবে। আর প্রতিটি নেকি দশগুণ বৃদ্ধি করা হবে। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মিম একটি হরফ।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৯১০

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহতায়ালা কোরআনকে রহমত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘এবং নিশ্চিত এটা (কোরআন) মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত।’ -সুরা নামল : ৭৭

অন্য একস্থানে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘(এই কুরআন) হেদায়েত ও রহমত সৎকর্মপরায়ণদের জন্য।’ -সুরা লোকমান : ৩

প্রত্যেক মানুষ এই পৃথিবীতে সম্মান, আত্মতৃপ্তি ও ভালো অবস্থা নিয়ে জীবনযাপনের জন্য আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী। এই পৃথিবী ত্যাগ করার পর আলমে বারজাখে (কবরের) প্রত্যেক মানুষ আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এবং আরামদায়ক ঘুমের জন্য আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী। কবরের জীবনের পর কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত প্রাপ্তির জন্যও প্রত্যেক মানুষ আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী। পৃথিবী, কবর, পরকাল এই তিনটি স্থানে আমরা সম্মানজনক জীবন যাপনের জন্য আল্লাহর রহমতের মুখাপেক্ষী। ওই রহমত যার আমরা কদমে কদমে মুখাপেক্ষী, তা কোরআন মাজিদ দ্বারা হাসিল করা সম্ভব।

আসুন গভীরভাবে চিন্তা করি, কোরআন মাজিদ কীভাবে পৃথিবী, কবর এবং পরকালে আমাদের জন্য রহমত। কোরআনের আয়াত শ্রবণে ঈমানদারদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা এরূপ হয় যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভীত হয়ে পড়ে, আর যখন তাদের সামনে তার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন ওই আয়াতসমূহ তাদের ঈমানকে আরও বৃদ্ধি করে দেয়, আর তারা নিজেদের প্রতিপালকের ওপর নির্ভর করে।’ -সুরা আনফাল : ২

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর