টঙ্গি ইজতেমার মাঠে সাধারণ তাবলিগি সাথী, আলেম-উলামা ও মাদরাসার ছাত্রদের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কাকরাইলের শুরা সদস্যরা।
রোববার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে পল্টনের হোটেল জাফরানে এই সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা ‘শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখ ও কাকরাইল মসজিদের শুরার মুরুব্বি হযরত’ ব্যানারে।
সংবাদ সম্মেলনে উলামায়ে কেরাম ইজতেমার মাঠে দিল্লির মাওলানা সাদপন্থীদের হামলা, তাবলিগি সাথীদের মারধর, ইজতেমার মাঠের সম্পদ নষ্ট ও কোরআনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুরের প্রতিবাদ জানান। সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি এবং টঙ্গি ইজতেমার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভিক্টোরিয়া মসজিদের ইমাম ও খতিব, কাকরাইলের মুকিম মুরুব্বি মুফতি আমানুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন কাকরাইলের সিনিয়র শুরা সদস্য হাফেজ মাওলানা যোবায়ের, মাওলানা ওমর ফারুক, কাকরাইলের মুরুব্বি মাওলানা আবু জাফর, মুফতি আবদুল বারি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার (বেফাক) সিনিয়র সহ-সভাপতি আল্লামা আশরাফ আলী, বেফাকের মহাপরিচালক মাওলানা যোবায়ের আহমদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমি, মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, উত্তরবঙ্গ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি মুফতি আরশাদ রাহমানি, খিলগাঁও মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা নূরুল ইসলাম, আরজাবাদ মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা বাহাউদ্দিন যাকারিয়া, বেফাকের যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি মাহফুজুল হক, কওমি ফোরামের সমন্বয়ক মাওলানা মামুনুল হক, বেফাকের মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমি ও মাওলানা লোকমান মাজহারি প্রমুখ।
লিখিত মাওলানা সাদকে নিয়ে কেন বির্তক সে বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ৬ দফা দাবি পেশ করা হয়। সেই সঙ্গে সোমবার (৩ ডিসেম্বর) সারাদেশে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ৬ দফা দাবি হলো-
১. এ হামলার নির্দেশদাতা ওয়াসিফুল ইসলাম ও শাহাবুদ্দীন নাসিমগংসহ হামলার সঙ্গে জড়িতদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা।
২. হামলায় আহত-নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
৩. টঙ্গি ময়দান এতদিন যেভাবে শুরাভিত্তিক তাবলিগের সাথী ও উলামায়ে কেরামের অধীনে ছিলো- তাদের কাছেই মাঠ বুঝিয়ে দেওয়া।
৪. কাকরাইলের সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা থেকে ওয়াসিফ ও নাসিমগংকে বহিষ্কার করতে হবে।
৫. সারাদেশের উলামায়ে কেরাম ও শুরাভিত্তিক তাবলিগের সাথীদের ওপর হামলা-মামলা বন্ধ করে পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
৬. টঙ্গি বিশ্ব ইজতেমা যথাসময়ে পূর্বঘোষিত সময়ে (১৮-২০ ও ২৫-২৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠানের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মাওলানা সাদের সঙ্গে মিলেমিশে তাবলিগের কাজ করা সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কাকরাইলের সিনিয়র শুরা সদস্য মাওলানা যোবায়ের বলেন, ‘তিনি শরিয়ত পরিপন্থী কাজে লিপ্ত, তার সঙ্গে মিলতে হলে তো আমাদেরও শরিয়ত ছাড়তে হবে, কোনো মুসলমান কি শরিয়ত ছাড়তে পারে?’
শনিবারের ঘটনার এখনও কোনো মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে অপর এক প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়। সেই সঙ্গে তাবিলিগি মুরুব্বিরা বলেন, প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ শনিবারের ঘটনায় আহত হয়েছেন। এ সময় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইজতেমার মাঠে ছোট বাচ্চাদের যে ছবি দেখানো হয়েছে, তারা মূলত ইজতেমার মাঠে অবস্থিত একটি মাদরাসার ছাত্র। মাদরাসাটি কাকরাইলে মাদরাসার একটি শাখা। তাদেরকে কিংবা কাউকেই ইজতেমার মাঠ দখলের জন্য জড়ো করা হয়নি। সাদপন্থীরা ওই ছোট বাচ্চাদের ওপরও হামলা করেছে, পরে আবার বাচ্চাদের ছবি ব্যবহার করে অপপ্রচার করছে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে শনিবারের হামলার প্রতিবাদে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদে যেয়ে শেষ হয়।