জগতের মালিক মহান আল্লাহ। তিনি মানুষকে খুব আদর করে, ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। তার অবাধ্য হওয়ায় তিনি কোনো প্রতিশোধ নেন না। উল্টো তার রহমত থেকে নিরাশ হতে বারণ করেছেন, গোনাহ পরিত্যাগ করার আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার বান্দারা! যারা অবিচার করেছো নিজেদের ওপর, নিরাশ হয়ো না তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মাফ করবেন সব পাপরাশি। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল ও বড় দয়ালু।’ -সুরা যুমার : ৫৩
আল্লাহতায়ালা অতীতের পাপ থেকে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন, তওবা করার কথা বলেছেন- খাঁটি তওবা। গতানুগতিকভাবে শুধু গৎবাঁধা তওবার বাক্য পাঠ করলেই তওবা করা হয় না। তওবা করা মানে ফিরে আসা। ছোট-বড় সব অন্যায় থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। তাই তওবা করতে হবে খাঁটি, বিশুদ্ধ ও সত্যিকারের তওবা। মহান আল্লাহ বান্দাকে সত্যিকারের তওবা করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট প্রকৃত তওবা করো।’ -সুরা তাহরিম : ৮
মানুষ হিসেবে আমরা কেউ পাপমুক্ত নই। কেউ জেনে-শুনে আর কেউ অজান্তেই পাপ করে বসি। তাই আসুন! পাপ বর্জন করি এবং সংকল্প করি- আর পাপ করব না। মহান আল্লাহ অতি দয়াবান ও ক্ষমা প্রদানকারী। আশা করা যায়, তিনি আমাদের সমস্ত পাপরাশি মুছে দেবেন। কেননা, তিনি নিজেই কোরআন মাজিদে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ করবে কিংবা নিজের ওপর অবিচার করবে অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে।’ -সুরা আন নিসা : ১১০
আল্লাহতায়ালা মুমিন বান্দাদের উৎসাহ দিয়েছেন, যেন তারা কৃত অপরাধ থেকে ফিরে এসে তওবা করে। তিনি বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা করো, হতে পারে তোমরা সকলে সফলকাম হবে।’ -সুরা নুর : ৩১
‘তবে যারা তওবা করবে এবং ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে আল্লাহ তাদের মন্দ আমলকে নেক আমলে বদলে দেবেন।’ -সুরা আল ফুরকান : ৭০
আল্লাহতায়ালা সৎকর্মশীল বান্দাদের প্রশংসা করে তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেছেন, ‘এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে, অথবা নিজেদের প্রতি অবিচার করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা করে। আল্লাহ ব্যতীত কে পাপ মার্জনা করবে এবং তারা যা করে ফেলে জেনে-শুনে তারই পুনরাবৃত্তি করে না। তাদের পুরস্কারই হচ্ছে- তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা এবং জান্নাত। যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং সৎকর্মশীলদের পুরস্কার কত উত্তম।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৩৫-৩৬
গোনাহ করতে করতে আমরা এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ি যে, আমরা এত গোনাহ করেছি, আল্লাহ কি মাফ করবেন? এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি আর সেই সুযোগে শয়তান আমাদের দ্বারা আরও গোনাহ করায়। শয়তানকে আমরা তিনবার সফল করি, প্রথমবার গোনাহ করে, দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে, তৃতীয়বার ইস্তেগফার ও তওবা না করে গোনাহ করতে থেকে। তাই শয়তানকে ব্যর্থ করে আমরা যদি সফল হতে চাই এবং হতাশা থেকে বাঁচতে চাই, তাহলে আমাদেরকে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। আল্লাহ তার রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন এবং সব গোনাহ মাফ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সুরা যুমার : ৩৯
বর্ণিত আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো যে, শয়তানের প্ররোচনায় পরে আমরা যতই গোনাহ করি না কেন; আমাদের কখনো হতাশ হওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর রহমতের আশায় আশাবাদী হয়ে তার কাছে মাফ চাইতে হবে। তিনি ছাড়া মাফ করার কে আছে আর?
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা রাত-দিন পাপ করে থাকো, আর আমি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব।’ -সহিহ মুসলিম : ৬৭৩
মানুষ হিসেবে আমরা দুনিয়া স্বল্প সময়ের জীবনে নিজেদের প্রতি প্রচুর অন্যায় করে থাকি। শয়তানের প্ররোচনায় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে, দিবসের আলোকে ও রাতের আঁধারে গোনাহের অথৈ সাগরে ডুবে যাই। নানা ধরনের পাপ অনায়াসে করে ফেলি। তবে অনুতপ্ত হৃদয়ে যখন আল্লাহর কাছে আমারা ক্ষমা ভিক্ষা চাইবো, তখন তিনি আমাদের সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা ও মরুভূমির বালিকণার পরিমাণ ছাড়িয়ে যায়!
তবে তিনি কোরআন মাজিদে বলে দিয়েছেন, শিরকের গোনাহ মাফ করবেন না। এছাড়া অন্যান্য গোনাহ মাফ করবেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার সঙ্গে অংশী (শিরক) করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন।’ -সুরা আন নিসা : ১১৬
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হজরত জিবরাইল (আ.) আমার কাছে এসে বললেন, আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে (শিরক না করে) মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও? তিনি বললেন, যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও। -সহিহ বোখারি : ৬৪৪৪
আমরা দিবা-রাত পাপ করি কিন্তু অনুশোচনা করি না। অনুতপ্ত হয়ে তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে স্রষ্টার কাছে ক্ষমা চাই না! এই অভ্যাস কোনোভাবেই কাম্য নয়। পাপের পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নাম ইস্তেগফার। কোরআন মাজিদের বহু স্থানে আল্লাহ তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সুরা আন নিসা : ১০৬
নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘আমি দিনে ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।’ -সহিহ মুসলিম : ৭০৩৩
তিনি আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তেগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) ও তওবা করে থাকি।’ -সহিহ বোখারি : ৬৩০৭
নবী কারিম (সা.)-এর জীবনে কোনো গোনাহ নেই। তিনি নিষ্পাপ। তারপরও তিনি প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার মহান রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেন, তওবা করতেন। একটু ঠা-া মাথায় একটু ভেবে দেখুন, আমার-আপনার মতো পাপীদের কী করা উচিত? প্রতিদিন কতবার ইস্তেগফার ও তওবা করা উচিত? অথচ আমরা তওবা-ইস্তেগফারের বিষয়ে নিতান্তই উদাসীন। মহান আল্লাহ সবাইকে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফারের তওফিক দান করুক, আমিন।