শিক্ষা ইসলামের প্রাথমিক মৌলিক বিষয়াবলির অন্তর্ভুক্ত। স্বয়ং আল্লাহ হলেন আদি শিক্ষক। তাই তো ফেরেশতারা বলেছিল, ‘হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র! আপনি যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের আর কোনো জ্ঞান নেই; নিশ্চয়ই আপনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী।’ -সুরা আল বাকারা : ৩২
শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের জন্য পঠন-পাঠন অন্যতম মাধ্যম। নবী কারিম (সা.)–এর প্রতি অহির প্রথম নির্দেশ ছিল- ‘পড়ো, তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন আলাক (জমাট রক্ত) থেকে। পড়ো, তোমার রব মহা সম্মানিত, যিনি শিক্ষাদান করেছেন লেখনীর মাধ্যমে। শিখিয়েছেন মানুষকে, যা তারা জানত না।’ -সুরা আলাক : ১-৫
ইসলামি শিক্ষায় অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার মূল পাঠ্যগ্রন্থ কোরআন মাজিদ। ‘দয়াময় রহমান (আল্লাহ)! কোরআন শেখাবেন বলে মানব সৃষ্টি করলেন, তাকে বর্ণনা শেখালেন।’ -সুরা আর রাহমান : ১-৪
কোরআন মাজিদে এসেছে বিশ্ব মানবতাকে হেদায়েতের সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘রমজান মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েতস্বরূপ এবং হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদের্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ -সুরা আল বাকারা : ১৮৫
হেদায়েতের এই কিতাব আল কোরআন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ করা হয়েছে। পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম মানবতার মুক্তির মহাসনদ এবং উন্নত জীবনধারার ব্যবস্থাপক। এখানে নৈতিকতার প্রাণশক্তি স্পন্দিত এবং প্রকৃত শিক্ষার আলো বিচ্ছুরিত। মানুষের জীবনধারা, কর্মপদ্ধতি, আদর্শ, কর্মচাঞ্চল্য, ত্যাগ, সাধনা ও সফলতার সমন্বয় এবং অভিব্যক্তির পরিস্ফূটন ঘটেছে ইসলামে। ইসলাম মানুষকে সর্বদা শিক্ষার প্রতি উদ্ধুদ্ধ করে এবং আহ্বান করে অজ্ঞতার অমানিশার বুকচিরে সুশিক্ষার আলোর দিকে আসার। ইসলামি জীবন দর্শনে শিক্ষা মানবতার সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ নিশ্চিতকারী এক শক্তি। এ শিক্ষা মানুষের দেহ ও আত্মার পূর্ণতা বিকাশে নিরন্তর প্রয়াসী; যে শিক্ষা সত্যের আবিষ্কার, মিথ্যার অপনোদন, মানবতাবিধ্বংসী সব ধরনের কাজকে পরিহার এবং পাশবিকতাকে নির্মূল করে মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত গুণাবলির বিকাশ ঘটায়।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসে শিক্ষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা নানা কৌণিকে সাবলীল ভাষায় পরিব্যক্ত হয়েছে। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যাকে হেকমত তথা দ্বীনের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাকে দেওয়া হয়েছে বিপুল কল্যাণ ও সমৃদ্ধি।’ -সুরা আল বাকারা : ২৬
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত ও প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বিদ্যার্জনে ব্যাপৃত থাকে এবং সে অবস্থায় তার মৃত্যু সমাগত হয়, জান্নাতে তার এবং নবীদের মধ্যে কেবল একটি ধাপই ব্যবধান থাকবে।’ -দারিমি
শিক্ষা বিষয়ে এমন অসংখ্য আয়াত ও হাদিস বিদ্যমান, যা শিক্ষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। বস্তুত শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের সোপান। শিক্ষা ইসলামের অন্যতম মূল ভিত্তি। শিক্ষা ছাড়া ভালো মানুষ হওয়া যায় না। শিক্ষা ছাড়া ভালো মুসলমান হওয়া যায় না। শিক্ষা ছাড়া পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার বান্দা হওয়া যায় না। তাই দেখা যায়, ইসলামের প্রথম বার্তা ছিলো শিক্ষার নির্দেশ। মহান আল্লাহর এ বার্তা থেকেই বোঝা যায়, মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে শিক্ষার গুরুত্ব। কোরআন মাজিদে রয়েছে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রচুর আয়াত। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘জিজ্ঞেস করুন, যারা জানে (আলেম ও জ্ঞানী) আর যারা জানে না (জাহেল ও মূর্খ) তারা উভয় কি সমান হতে পারে?’ –সুরা জুমার : ৯
ইলম বা জ্ঞান সম্পর্কেও রয়েছে প্রচুর হাদিস। ইলম (জ্ঞান) ও আলেম (জ্ঞানী) সম্পর্কে রয়েছে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রচুর বাণী। তিনিই বলেছেন, ‘প্রতিটি মুসলিমের (নর ও নারী) জন্য ইলম (শিক্ষা) অর্জন করা ফরজ।’ -ইবনে মাজাহ
বস্তুত ইসলাম ও শিক্ষার পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীরে। বিশেষ করে ইসলামের মূল কথা হলো- সব মুসলিমকে অবশ্যই কমবেশি শিক্ষিত হতে হবে। ইসলাম ধর্ম সব ধরনের অজ্ঞতাবিরোধী। তাই ইসলাম অশিক্ষিত লোকদের শিক্ষার অনুগামী হতে বলে। শিক্ষাহীনতাকে ইসলাম ভর্ৎসনা করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মূর্খতা মানে শুধু অশিক্ষা নয়।
ইসলাম বলে, সত্যের ব্যাপারে অজ্ঞতা এক ধরনের অন্ধতা। বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনৈতিক গোঁড়ামি এবং চিন্তার ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণও এক ধরনের মূর্খতা। অনেকেই আবার ইসলামি চেতনা, বোধ-বিশ্বাস ও স্বাভাবিক জ্ঞানার্জনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখেন। অথচ ইসলামি শিক্ষা, চিন্তা-চেতনা ও কর্মতৎপরতায় জ্ঞানার্জন, চর্চা এবং আধ্যাত্মিকতার মাঝে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নেই।