নানাবিধ দুশ্চিন্তা ও হতাশার কারণে মানুষের মাঝে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ সমাধান হিসেবে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ। আবার কেউ জীবনের স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে ফেলে।
তবে, মুসলিম হিসাবে আমরা বিশ্বাস করি; পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ নেই যার চিকিৎসা আল্লাহতায়ালা দেননি। মানসিক চাপসহ নানাবিধ রোগবালাই থেকে উত্তরণে ইসলামি ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকর।
অহেতুক দুশ্চিন্তা অনেকটা চক্রের মতো। যত দূর করতে চাইবেন, তত আপনাকে জেঁকে ধরবে। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।’ মস্তিষ্ক যত অলস বসে থাকে, তত মাথায় জমা হয় অহেতুক চিন্তা। তাই নিজেকে ব্যস্ত রাখা ভালো কাজের সঙ্গে।
মনে রাখতে হবে, জীবনে পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় হতাশ হওয়া কিংবা মানসিক চাপ অনুভব করা নতুন কোনো বিষয় নয়। বিপদ-আপদ, চাপ কিংবা না পাওয়ার বেদনা যত বেশিই হোক না কেন- কোনো অবস্থায়ই হতাশ হওয়া ঈমানদারের কাজ নয়। বরং সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর দৃঢ় আস্থা রাখা রেখে সুস্থ থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। এখানে দুশ্চিন্তা কাটাতে ও হতাশামুক্ত জীবন লাভে করণীয় কিছু আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
আল্লাহর ওপর ভরসা
মানসিক অশান্তি থেকে মুক্ত থাকতে মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলের (ভরসা) কোনো বিকল্প নেই। কেননা তিনিই বলেছেন, ‘যে মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ -সুরা তালাক : ৩
সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহর ওপর নির্ভরশীলতা ও পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস স্থাপনে মানুষের মনোবল বাড়ে। ফলে সে অন্তরে খুঁজে পায় এক অনাবিল সুখ ও পরিতুষ্টি। যে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করতে জানে, তার জন্য কোনো চিন্তা নেই। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ -সহিহ বোখারি
দোয়া
মানসিক চাপ কমাতে নিয়মিত দোয়া করা উচিত। কারণ হাদিসে দোয়াকে ইবাদতের মূল বলা হয়েছে। দোয়া করলে, কোনো কিছু চাইলে মহান আল্লাহ খুশি হন। না করলে বরং অসন্তুষ্ট হন।
তবে দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে জানি, কোনো বিপদে পড়া লোক যদি তা পড়ে তবে আল্লাহ সে বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে- আমার ভাই (হজরত) ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। তাহলো- ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।’ -সুনানে তিরমিজি
নামাজ
যেকোনো বিপদ-মুসিবত, পেরেশানির সময় নামাজের মাধ্যমেই প্রকৃত প্রশান্তি লাভ করা যায়। কেননা নামাজের মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর সাহায্য লাভ করেন। তাই মানসিক প্রশান্তি লাভে নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে আমার নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করো। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সেসব বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ -সুরা বাকারা : ৪৫
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হলে নামাজ আদায় করতেন। -সুনানে আবু দাউদ
সাহাবায়ে কেরামও এই আমলে অভ্যস্ত ছিলেন। ছোট থেকে ছোট কোনো বিষয়ের জন্যও তারা নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
ইস্তেগফার
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে বেশি বেশি ইস্তেগফারের বিকল্প নেই। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। তার সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। -সুনানে আবু দাউদ
কোরআন তেলাওয়াত
কোরআন তেলাওয়াত মানুষের অন্তরকে প্রফুল্ল এবং হৃদয়কে করে প্রশান্ত। কেননা কোরআন তেলাওয়াত মুমিনের প্রফুল্লতার অনন্য উৎস। কোরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ সব দুশ্চিন্তা ও হতাশা থেকে মুক্ত থাকে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, আল্লাহ তাদের কোরআন দ্বারা শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং নিজ অনুমতিক্রমে তাদেরকে কুফরির অন্ধকার থেকে বের করে ইমানের আলোর দিকে নিয়ে যান এবং তাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন।’ -সুরা মায়িদা : ১৫-১৬
দরুদ পাঠ
দরুদ পড়লে আল্লাহতায়ালা বান্দার প্রতি রহমত নাজিল করেন। এ রহমত মানুষকে যাবতীয় মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখে। এটি আত্মপ্রশান্তি লাভের সহজ উপায়ও বটে। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়া এমন একটি ইবাদত যে, আল্লাহতায়ালা তা কবুল করে নেন।