হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিদের মধ্যে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে তাদের দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তাদেরকে বলা হয় আশারায়ে মুবাশশারাহ। তারা হলেন নবীদের পর উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম লোক। এই ১০ জন ছাড়াও হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো অনেক সাহাবির নাম উল্লেখ করেন, আবার কাউকে ইঙ্গিতে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। তা ছাড়া তিনি একটি পরিবার, সাহাবিদের কিছু জামাতকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জনের তালিকা বেশ কিছু হাদিসে এসেছে। তার মধ্যে একটি হাদিস হলো-
হজরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আবু বকর জান্নাতি, উমর জান্নাতি, উসমান জান্নাতি, আলী জান্নাতি, ত্বালহা জান্নাতি, জুবাইর জান্নাতি, আবদুর রহমান ইবনে আওফ জান্নাতি, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস জান্নাতি, সাঈদ জান্নাতি এবং আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ জান্নাতি। -জামে আত তিরমিজি : ৩৭৪৭
এই ১০ জন নবীদের পর সর্বাধিক সম্মানিত ব্যক্তি, উম্মতের অগ্রগামী ব্যক্তি। এই ১০ জন ছাড়া আরো যাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন তাদের অন্যতম হচ্ছেন-
হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) ও হজরত হুসাইন ইবনে আলী (রা.)। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের উভয়ের সম্পর্কে বলেছেন, ‘হাসান ও হুসাইন দুই জন জান্নাতের যুবকদের নেতা।’ -ইবনে হিব্বান : ৬৯৫৯
হজরত হামজা (রা.)
মুসতাদরাকে হাকেমের বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাইয়িদুশ শুহাদা হলেন- হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব।’সুতরাং শহীদরা যদি জান্নাতি হন তবে তাদের নেতাও জান্নাতি হবেন।
হজরত জাফর ইবনে আবি তালেব (রা.)
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি জান্নাতে জাফর ইবনে আবি তালেবকে ফেরেশতাদের সঙ্গে পাখির মতো উড়তে দেখেছি।’-জামে সগির : ৪৩৬৭
হজরত বিলাল ইবনে রাবাহ (রা.)
হজরত বুরাইদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন ভোরে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত বিলাল (রা.)-কে ডেকে বললেন, ‘হে বিলাল! তুমি জান্নাতে কী কারণে আমার আগে আগে থাকছ? যখনই আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি সে সময়ই আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। গত রাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। তারপর বিলাল (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কখনো আমি আজান দিলেই দুই রাকাত নামাজ আদায় করি এবং কখনো আমার অজু ছুটে গেলেই আমি অজু করি এবং মনে করি আল্লাহর নামে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা আমার কর্তব্য। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এ দুটি কারণেই (তোমার এ মর্যাদা)।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৬৮৯
জনৈক বেদুইন সাহাবি
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক বেদুইন নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যদি আমি তা সম্পাদন করি তবে জান্নাতে প্রবেশ করব। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করবে আর তার সঙ্গে অপর কোনো কিছু শরিক করবে না। ফরজ নামাজ আদায় করবে, ফরজ জাকাত প্রদান করবে, রমজান মাসে রোজা পালন করবে। সে বলল, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ করে বলছি, আমি এর চেয়ে বেশি করব না। যখন সে ফিরে গেল, নবী কারিম (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি কোনো জান্নাতি ব্যক্তিকে দেখতে পছন্দ করে সে যেন এই ব্যক্তিকে দেখে নেয়।’-সহিহ বোখারি : ১৩৯৭
হজরত ইয়াসার (রা.)-এর পরিবার
হজরত সুমাইয়া (রা.), হজরত ইয়াসার (রা.), হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রা.)-এর ওপর কাফেরদের নির্যাতন দেখে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বলেছিলেন, ধৈর্য ধরো হে ইয়াসারের পরিবার! তোমাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে। -ইবনে আবিদ দুনিয়া, কিতাবুস সবর
বদরি সাহাবি
ইসলামের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধ বদরের প্রান্তরে ৩১৩ জন সাহাবি অংশগ্রহণ করেছেন। বদরি সাহাবিদের সম্পর্কে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস হলো, হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা বদর ও হুদায়বিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে তারা কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’-মুসনাদে আহমাদ
বায়াতে রিদওয়ানের শপথকারী সাহাবিরা
ষষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি হয়। যেসব মুমিন হুদায়বিয়ার দিন গাছের নিচে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে জান্নাতের সুসংবাদ দেন। তাদের সংখ্যা চৌদ্দ শ’ জন। হজরত জাবের (রা.) বলেন, হুদায়বিয়ার দিন আমাদের ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীদের মধ্যে উত্তম মানুষ।’-সহিহ বোখারি : ৪১৫৪
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘যারা গাছের নিচে বায়াত করেছে তাদের কেউ জাহান্নামে যাবে না।’-সুনানে তিরমিজি : ৩৮৬০
তা ছাড়া বিভিন্ন হাদিস থেকে এরকম আরো কিছু সাহাবির ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.), হজরত সাবিত ইবনে কুয়াইস (রা.), হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.), হজরত উক্কাসা ইবনে মুহসিন (রা.) সহ আরো অনেকে।
জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন যেসব নারী সাহাবি
নারীদের মধ্যে অনেক সাহাবিকে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- হজরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.)। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত খাদিজা (রা.)-কে জান্নাতে মণি-মুক্তাখচিত একটি প্রাসাদের খোশখবর দেওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-কে আদেশ করেন। -সহিহ বোখারি : ৩৮১৬
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ আরো যাদেরকে দিয়েছেন তারা হলেন- হজরত ফাতেমাতুজ জাহরা (রা.)। উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন হজরত ফাতেমা (রা.) কে বলেন, তুমি মারইয়াম বিনতে ইমরান ছাড়া জান্নাতের নারীদের নেত্রী হবে। তখন তিনি আনন্দে হেঁসে উঠেছিলেন। -সুনানে তিরমিজি : ৩৮৯৩
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) জান্নাতের সুসংবাদ আরো যাদেরকে দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন হজরত আয়েশা (রা.)। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জিবরাইল (আ.) একখানা সবুজ রঙের রেশমি কাপড়ে তার (আয়েশা) প্রতিচ্ছবি নবী কারিম (সা.)-এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার স্ত্রী। -সহিহ বোখারি : ৫১২৫
এ ছাড়া আরও বিভিন্ন হাদিস থেকে এমন আরো কিছু নারী সাহাবির ব্যাপারে রাসুল (সা.) কর্তৃক জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন- একজন কালো নারী, যিনি মসজিদে নববির খাদেম ছিলেন। রাসুল (সা.) তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
দুনিয়াতে জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করা হলো- চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করা। আর যারা এমনটি পেয়েছেন তারা হলেন উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।