আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। একসময় দেশ ও জাতি তার হাত ধরেই পরিচালিত হবে। এ জন্য শিশু সন্তানের যথাযথ লালন-পালনের বিষয়ে ইসলাম গুরুত্বারোপ করেছে। তার চেতনা বিকাশের বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে স্পষ্ট নির্দেশনা। কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ করো এবং নিজেও তাতে অবিচল থাকো।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২
বর্ণিত আয়াতের বক্তব্যের আলোকে আমরা অনুমান করতে পারি, অধীনস্থদের বিষয়ে ইসলাম কতটা স্পষ্ট নির্দেশ প্রদান করেছে। রহমতের নবী (সা.) বলেন, সাত বছর বয়স হলে শিশুকে নামাজের আদেশ দাও, দশ বছর হলে চাপ সৃষ্টি করবে, প্রয়োজনে মৃদু প্রহার করবে। -সুনানে আবু দাউদ : ১/৭০
শিশুর চেতনা বিকাশে ইসলামের অবস্থান এ হাদিস থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়। ইসলামি চেতনা ও রুচি-প্রকৃতি নিয়ে সন্তানের বেড়ে উঠার বিষয়ে ইসলাম সামান্যতম দুর্বলতা প্রকাশ করেনি। আজকের সময়ে কিছু বন্ধুরা শিশুদের মসজিদে আসা, অথবা অভিভাবক কর্তৃক নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান। তাই এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো-
এক. হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, মসজিদে বসে আমরা নামাজের অপেক্ষা করছিলাম। হজরত রাসুলে কারিম (সা.) তখন আপন নাতি হজরত উমামা বিনতে জয়নব (রা.) কে নিয়ে আসেন। তিনি নবী কারিম (সা.)-এর কোলে ছিলেন। তাকে কাঁধে নিয়ে রাসুলে কারিম (সা.) নামাজের ইমামতি করেন। রুকুতে যাওয়ার সময় তাকে জমিনে রেখে দিতেন। সিজদা থেকে উঠে তাকে আবার কাঁধে নিয়ে নিতেন। -সহিহ বোখারি : ১০৪
এমন স্পষ্ট হাদিস থাকার পরও আমরা শিশুদেরকে মসজিদে নিয়ে আসতে নিষেধ করছি, বাধা প্রদান করছি। কিন্তু রাসুল (সা.) শিশুকে মসজিদে নিয়ে এসে, একেবারে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করছেন।
দুই. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) নামাজ পড়তেন, হাসান ও হুসাইন তখন তার পিঠে চড়ে বসতেন। মানুষ তাদেরকে সরিয়ে দিতে চাইতেন। নবী কারিম (সা.) তখন বলেন, ‘তাদেরকে ছেড়ে দাও, আল্লাহর শপথ! আমাকে যে ভালোবাসার দাবী করে, সে যেন তাদেরকেও ভালোবাসে। -আহাদিসু বিশানিস সিবতাইন : ২৯৩
তিন. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলে কারিম (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করছিলাম। সিজদায় গেলে হাসান ও হুসাইন (রা.) তার পিঠে উঠে যেতেন। নবী কারিম (সা.) সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাদেরকে হাত ধরে জমিনে নামিয়ে দিতেন। পুনরায় সিজদায় গেলে তারা উভয় পুনরায় পিঠে চড়ে বসতেন। -আশ শরিয়া : ৫/৬১৬১
চার. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মসজিদে নববিতে নামাজের ইমামতি করছিলেন। একজন শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে তিনি সংক্ষিপ্ত সুরা দিয়ে নামাজ শেষ করে দেন। -মুসনাদে আহমাদ : ৯৫৮১
অন্য হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো একদিন এশার নামাজ পড়াতে আসতে নবী কারিম (সা.) একটু দেরি করেন। ফলে মসজিদে উপস্থিত শিশুরা ঘুমিয়ে পড়ে। -সহিহ বোখারি : ১/৮০
এসব হাদিসের বক্তব্য স্পষ্ট ও নির্দেশক। হজরত রাসুলে কারিম (সা.)-এর যুগে শিশুদের মসজিদে যাওয়ার বিষয়টি আমাদেরকে দিবালোকের মত স্পষ্ট করছে। আমাদেরকে বার্তা দিচ্ছে, আমরাও যেন শিশুদেরকে মসজিদে নিয়ে যাই, তাদেরকে মসজিদে যেতে বাধা প্রদান না করি।
তবে, অন্য হাদিসের আলোকে বুঝে আসে যে, কিছুটা বোধশক্তি হওয়ার আগে একদম শিশুকে মসজিদে নিয়ে আসার দরকার নেই। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, রাসুল (সা.) বলেন, শিশুরা যখন ডান-বাম বুঝতে শুরু করে, তখন তাদেরকে নামাজের নির্দেশ প্রদান করবে। -মাজমাউজ জাওয়ায়িদ : ১/৭৯৯
তাই, আমরা শিশুদেরকে মসজিদে যেতে কোনোভাবেই যেন বাধা প্রদান না করি। তাদেরকে মসজিদে যেতে উদ্বুদ্ধ করি। তাদের বুঝ কম হলে পাশে রেখে নামাজ আদায় করি, যাতে দুষ্টুমি করতে বা অন্যের নামাজে ব্যাঘাত ঘটার মতো কিছু না হয়।