ভালোবাসা হলো কারো প্রতি অন্তরের আকর্ষণ। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেন, ভালোবাসা হলো কোনো প্রিয় ও সাধের জিনিসের প্রতি স্বভাবের আকর্ষণ। ভালোবাসা চার প্রকার- ১. ওয়াজিব ভালোবাসা, ২. হারাম ভালোবাসা, ৩. প্রশংসনীয় ভালোবাসা ও ৪. নিন্দনীয় ভালোবাসা।
সৃষ্টিকর্ত আল্লাহতায়ালা, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.), আহলে বাইত ও নেককার, মুত্তাকি-পরহেজগার ব্যক্তিদের ভালোবাসা ওয়াজিব। মুমিনের জন্য দেব-দেবী ইত্যাদিকে ভালোবাসা হারাম। স্বভাবগতভাবে ভালোবাসা- পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন প্রমুখকে ভালোবাসা এবং নেককাজের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি প্রশংসনীয় ভালোবাসা। গোনাহের কাজের প্রতি আকর্ষণ ও প্রীতি নিন্দনীয় ভালোবাসা।
ভালোবাসা আসে আসমান থেকে : আল্লাহর অলি, নেককার, পরহেজগার ও মুত্তাকি লোকদের ভালোবাসা আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনগণ অপর মুমিন ব্যতীত কাফেরদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না। যে এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ -সুরা আলে ইমরান : ২৮
এ আয়াতে বন্ধুরূপে গ্রহণ করার অর্থ ভালোবাসা। কারণ ভালোবাসা ছাড়া বন্ধুত্ব হয় না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন হজরত জিবরাঈল (আ.)-কে ডেকে বলেন, আমি দুনিয়ার অমুক বান্দাকে ভালোবাসি, তুমিও ভালোবাস। ফলে হজরত জিবরাঈল (আ.) আকাশে ফেরেশতাদের সামনে এ ঘোষণা দেন যে, দুনিয়ার অমুক ব্যক্তিকে আল্লাহ ভালোবাসেন তোমরাও তাকে ভালোবাস।
অতঃপর আকাশের ফেরেশতারা তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। এর ফলে জমিনে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয় এবং দুনিয়ার মানুষ তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। আর যখন আল্লাহ কোনো মানুষকে ঘৃণা করেন, তখন হজরত জিবরাঈল (আ.)-কে ডেকে বলেন, আমি অমুককে ঘৃণা করি, তুমিও তাকে ঘৃণা করো। অতঃপর জিবরাঈল (আ.) তাকে ঘৃণা করেন এবং আকাশের ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, আল্লাহ অমুক ব্যক্তিকে ঘৃণা করেন, আমিও ঘৃণা করি, তোমরাও তাকে ঘৃণা করো। অতঃপর ফেরেশতারা তাকে ঘৃণা করেন। এ ঘৃণার একটা প্রভাব পৃথিবীতে পড়ে। ফলে দুনিয়ার মানুষ তাকে ঘৃণা করে। -সহিহ মুসলিম
সুতরাং দুনিয়ার মানুষের কারো প্রতি ভালোবাসা আসমান থেকে আগত।
ভালোবাসার গুরুত্ব : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিচার দিবসে আল্লাহতায়ালা বলবেন, আমার সম্মানে যারা একে অন্যকে ভালোবেসেছো তারা কোথায়? আজ আমি আমার আরশের ছায়ায় তাদের ছায়া দান করবো সেদিন আমার আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। -সহিহ মুসলিম
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক সাহাবি আরজ করেন, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি কেয়ামতের জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? প্রশ্নকারী বলেন, আমি এজন্য কোনো প্রস্তুতি নিইনি, তবে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি যাকে ভালোবাসো তার সঙ্গেই তোমার হাশর হবে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, এ কথা শোনার পর সাহাবিদের যেরূপ খুশি দেখেছি, অন্য সময় এত খুশি হতে দেখিনি। -সহিহ বোখারি
হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার সম্মানে যারা একে অন্যকে ভালোবাসে, তাদের ভালোবাসা আমার দায়িত্ব হয়ে যায়। তিরমিজির আরেক বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, যারা আমার সম্মানে একে অন্যকে ভালোবেসেছে তাদের মধ্যে এমন নূর চমকাবে যা দেখে নবী ও শহীদরাও অবাক হবেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তুমি তার সঙ্গেই (পরকালে) থাকবে যাকে তুমি দুনিয়ায় ভালোবাস। -বায়হাকি
এক সাহাবি আরজ করেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি ওই ব্যক্তি সম্পর্কে কি বলেন, যে এক সম্প্রদায়কে ভালোবাসে, কিন্তু তাদের সঙ্গে তার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ব্যক্তিটি ওই ব্যক্তির সঙ্গেই (পরকালে) থাকবে, যাকে সে ভালোবাসে। -সহিহ বোখারি
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো- আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং আল্লাহর জন্য কাউকে ঘৃণা করা। -মুসনাদে আহমাদ
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের নিদর্শন হলো- আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা এবং কাউকে ঘৃণা করা। -বায়হাকি