মসজিদ অর্থ সেজদা বা নামাজের স্থান। মসজিদ নির্মাণের প্রধান উদ্দেশ্য নামাজ আদায়। কিন্তু শুধু নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই মসজিদের হক পুরোপুরি আদায় হয় না। একটি মসজিদ তখনই আদর্শ মসজিদ হয়ে ওঠে, যখন মসজিদটি নামাজের পাশাপাশি নানাবিধ দীন ও জনকল্যাণমূলক কাজের কেন্দ্র হয়ে ওঠে, যেমনটি ছিল হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মসজিদ।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদ এমন এক আদর্শ মসজিদের উদাহরণ হয়ে উঠেছে। বিশেষত, বিশিষ্ট দাঈ, জনপ্রিয় আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ জুমার নামাজের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মুসল্লিদের ঘিরে মসজিদটি কর্মতৎপরতা ও কর্মচঞ্চলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইতোমধ্যে বিজ্ঞজনদের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদকে ঘিরে কর্মতৎপরতার কয়েকটি হলো-
পবিত্র কোরআন শিক্ষার আসর
মানবজাতির হেদায়েতের জন্য নাজিল হয়েছে কোরআন মাজিদ। দুঃখের বিষয় হলো, এদেশের অধিকাংশ মানুষ কোরআন মাজিদ পড়তে পারেন না বা যারা পারেন তাদের তেলাওয়াত শুদ্ধ নয়। এই সংকট ঘোচানোর জন্য আলোচ্য মসজিদে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য কোরআন মাজিদ শেখার কোর্স চলমান রয়েছে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
শায়খ আহমাদুল্লাহ যখন মসজিদটির খতিবের দায়িত্ব নেন, তখন মসজিদটি ছিল একতলা। সে সময় জুমার দিনে মুসল্লিদের যে উপস্থিতি থাকত তাতে একতলাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু শায়খ আহমাদুল্লাহ খতিব হওয়ার পর মুসল্লিদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। মুসল্লিদের চাপ সামলাতে বর্তমানে মসজিদটির চারতলায় উন্নীত হয়েছে। প্রত্যেক জুমায় এখানে প্রায় চার হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। শায়খ আহমাদুল্লাহর বয়ান ও খুতবা শোনার জন্য অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এই মসজিদে উপস্থিত হন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব
প্রত্যেক শুক্রবারে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রশ্নোত্তর সেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন খতিব শায়খ আহমাদুল্লাহ। এই সেশনের মাধ্যমে মুসল্লিরা তাদের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যার সঠিক সমাধান পেয়ে থাকেন।
আলোচনা সংরক্ষণ ও অনইয়ারে পাবলিশড
এই মসজিদের প্রত্যেক জুমুআর বয়ান ও প্রশ্নোত্তর পর্ব রেকর্ড করা হয় এবং দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থান করা মুসলিমদের জন্য অনলাইনে পাবলিশড করা হয়। যেন মসজিদে উপস্থিত নির্দিষ্টসংখ্যক মুসল্লিদের বাইরেও অসংখ্য মানুষের কাছে মিম্বরের বার্তা পৌঁছে যায়।
দর্শনার্থীদের ভিড়
শায়খ আহমাদুল্লাহ জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য আলেম হওয়ার কারণে জুমার নামাজের পর খতিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও দোয়া নেওয়ার জন্য দর্শনার্থীদের ভিড় পরিলক্ষিত হয়, যে দৃশ্য অন্যান্য মসজিদে সচরাচর দেখা যায় না।
সেবামূলক কাজ
এই মসজিদ থেকে নানা ধরনের সামাজিক সেবামূলক কাজের নেতৃত্ব দেয়া হয়। যেমন- শীতবস্ত্র বিতরণ, ইফতার বিতরণ, কোরবানির গোশত বিতরণ ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ইত্যাদি।
ভূমিপল্লী আবাসন জামে মসজিদের মতো এদেশের সকল মসজিদ থেকে যদি মুসল্লিদের দীনি ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নতির জন্য নানামুখী সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়, তবে এদেশের ইসলাম ও মুসলমানদের চিত্র বদলে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।