নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হচ্ছে- নামাজ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায়ের ফজিলত অনেক। কিন্তু যারা জামাতে নামাজ আদায়ে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ব্যস্ততার কারণে কিংবা ভ্রমণজনিত কারণে জামাত শেষ হওয়ার পর মসজিদে এসেছেন একাকী নামাজ আদায় করবেন। কিন্তু এসে দেখেন, মসজিদ তালাবদ্ধ। তখন বিপদে পড়ে যান। শহর এলাকার প্রায় মসজিদের চিত্রই এমন।
অধিকাংশ মসজিদ নামাজের পর পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়। জামাতের পর যারা আসেন, তারা নামাজ পড়তে পারেন না। তাই হয়ত কখনো ওই ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়ে যায়।
শহরের মসজিদগুলোতে ফরজ নামাজের জামাতের পরেই মসজিদে বা বারান্দায় কিছু মানুষ একটু আরাম ও বিশ্রাম করতে চান। এভাবে বিশ্রাম গ্রহণ খুব দোষের কিছু না। বিশেষত রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ইত্যাদি এলাকার মসজিদগুলোতে মুসাফিরদের জন্য একটু বসার ব্যবস্থা বা স্থান করে দেওয়া উচিত। যাতে করে একজন মুসল্লি আরামে বাথরুম শেষে অজু করে নামাজ পড়তে পারেন। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে পারেন।
অনেক মসজিদে নামাজের পর এসি বা ফ্যানের নিচে কয়েক মিনিট বসাও যায় না। দায়িত্বশীল মুয়াজ্জিন বা কেউ এসে বন্ধ করে দেন। এতে করে মুসাফিরদের কষ্ট হয়। ক্লান্ত-শ্রান্ত মুসাফির পথিকও একজন মেহমান। তারও কিছু হক রয়েছে। হ্যাঁ, কিছু দুষ্টু লোক আছেন, যারা মসজিদের বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট করেন। হারানো যায় অনেক জিনিসপত্র। অবশ্যই নিরাপত্তার জন্য যথাসময়ে মসজিদ তালাবদ্ধ করে দেওয়া উচিত। তবে দায়িত্বশীলদের জন্য করণীয় হলো, তারা প্রতি নামাজের পর কিছু সময় মসজিদ বা বারান্দা খোলা রাখবেন, পথচারী মুসাফিরদের নামাজ আদায় ও বিশ্রামের জন্য।
মসজিদ কমিটিরও এ বিষয়গুলো বোঝা উচিত। মসজিদে আগত সকল মুসল্লি যাতে আরামে একটু সময় বসতে পারেন। নামাজ ও জরুরি প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন। প্রফুল্লচিত্তে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন। এই ব্যবস্থাটুকু অন্তত রাখা দরকার আমাদের শহর ও গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন সংলগ্ন মসজিদগুলোর ইমাম মুয়াজ্জিন ও কমিটির।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(পুণ্য রয়েছে তোমাদের জন্য,) যারা অর্থের প্রতি ভালোবাসা সত্ত্বেও; আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্থ- মুসাফির, ভিক্ষুক ও দাসমুক্তির জন্য দান করেন।’ -সুরা আল বাকারা : ১৭৭
এ আয়াতে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মুসাফিরদের জন্য খরচ করতে বলা হয়েছে। আমরা যদি পথচারী মুসাফির ভাইদের জন্য অন্তত এ খেদমতটুকু করতে পারি। অবশ্যই আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে দ্বিগুণ প্রতিদান দান করবেন।
এ ছাড়া হাদিসে কেয়ামত দিবসে আল্লাহতায়ালা দৃষ্টিপাত করবেন না, পবিত্র করবেন না মর্মে এমন এক ব্যক্তির কথা বর্ণিত হয়েছে, যার কাছে প্রয়োজন অতিরিক্ত পানি আছে। অথচ সে তা কোনো মুসাফিরকে দিতে অস্বীকার করে। -সহিহ বোখারি : ২৩৫৮
বর্ণিত হাদিস থেকে জানতে পারি, মুসাফিরের হক আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্যথায় দয়াময় আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে, ওই মুসলমানদের সম্পদ উত্তম। যে তা ন্যায়সঙ্গতভাবে উপার্জন করে। আল্লাহর পথে, এতিম-মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য খরচ করে। -সহিহ বোখারি : ২৮৪২
এ হাদিস থেকেও আমরা জানতে পারি, আমাদের উপার্জিত উত্তম অর্থ সম্পদ এতিম-অসহায় গরীব এবং মুসাফিরদের জন্য খরচ করা উচিত।