ভোট একটি আমানত ও সাক্ষ্য বিশেষ

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2024-01-06 19:19:58

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট প্রদান সাক্ষ্য দানের অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনের সুরা আল-মায়েদার ৬ থেকে ৯ আয়াতের আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয় থেকে জানা যায় যে, আরবি ‘শাহাদাৎ’শব্দ থেকে বাংলায় সাক্ষ্য শব্দটির উৎপত্তি। যা বাংলায় সাক্ষী বা সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শাহাদাৎ কিংবা সাক্ষী সম্পর্কে জানা জরুরি। আজকাল শাহাদাৎ তথা সাক্ষ্যদানের যে অর্থ সর্বসাধারণের মধ্যে প্রসিদ্ধ, তা শুধু মামলা-মোকাদ্দমায় কোনো বিচারকের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু কোরআন-সুন্নাহয় শব্দটি আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণরত বলা যেতে পারে, জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ প্রচলিত সব ধরনের নির্বাচনে ভোট দেওয়াও এক প্রকার সাক্ষ্যদান। এতে ভোট দাতার পক্ষ থেকে সাক্ষ্য দেওয়া হয় যে, আমার মতে অমুক ব্যক্তিগত যোগ্যতা, সততা ও বিশ্বস্ততার দিক দিয়ে জাতির প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও।’-সুরা আন নিসা : ১৩৫

ভোট প্রদানের অর্থ হলো- দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতি, অগ্রগতি ও কল্যাণের লক্ষ্যে নিজের সমর্থন তথা সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা দলকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনোনীত করা। এক্ষেত্রে ইসলামে কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। ভোটাধিকার প্রয়োগের সময় সেগুলো মাথায় রাখা আবশ্যক। কারণ, প্রতিটি মানুষ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো না কোনো বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত। প্রত্যেকেরই একে অপরের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ দায়বদ্ধতার বিষয়ে কেয়ামতের দিন প্রত্যেককেই জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! তোমরা প্রত্যকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই কেয়ামতের দিন তার দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।’-সহিহ বোখারি

ভোট প্রতিটি নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট ব্যক্তির নিজস্ব মতামত কিংবা জনমত প্রতিফলনের একটি গণতান্ত্রিক মাধ্যম ও পদ্ধতিবিশেষ। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ভোটের প্রয়োজন হয়। রাজনীতিতে ভোট এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একজন প্রার্থী গণতান্ত্রিক পন্থায় সরকার ব্যবস্থার কোনো না কোনো পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যারা ভোট প্রয়োগ করেন তাদেরকে ভোটার বলা হয়। সে হিসেবে বলা চলে, জনপ্রতিনিধিদের নিয়োগকর্তা ভোটাররা।

ভোট দেওয়া একটি মতামত, একটি রায় ও সাক্ষ্য বিশেষ। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার নিকট গচ্ছিত আমানত। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদার বান্দারা! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের আমানতেরও খেয়ানত করো না।’-সুরা আল আনফাল : ২৭

ভোট যেহেতু একটি রায় বা সাক্ষ্য, তাই ভোট প্রদানের ব্যাপারে প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হতে হবে। কেননা, অন্যায় করা আর অন্যায়কে সমর্থন করা একই অপরাধ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কল্যাণকর কাজ এবং তাকওয়ার ব্যাপারে একে অপরের সহযোগিতা করো। আর গোনাহ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে সাহায্য-সহযোগিতা করো না।’-সুরা আল মায়েদা : ২

দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, আমাদের জনগণ আজকাল নির্বাচনকে একটি হারজিতের খেলা মনে করে আসছে। এ কারণে কখনও পয়সার বিনিময়ে ভোটাধিকার বিক্রয় করা হয়। কখনও চাপের মুখে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা হয়। আবার কখনও সাময়িক বন্ধুত্ব এবং কারও কারও কিছু সস্তা অঙ্গীকারের মিথ্যা ভরসায় ভোটাধিকার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো ঈমানদারের কাজ নয়।

মনে রাখতে হবে, ভোট প্রদানের বিষয়টি শুধু পার্থিব নয়, পরকালেও এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এসব বিষয় চিন্তা-ভাবনা করে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন- এমনটাই সব পক্ষের প্রত্যাশা হওয়া বাঞ্ছনীয়।

প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎ, ধর্মভীরু ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট প্রদান করা যেমন সওয়াবের কাজ এবং এর সুফল ভোটদাতাও প্রাপ্ত হয়। তেমনই অযোগ্য ও অধর্ম পরায়ন ব্যক্তিকে ভোট দেয়া মিথ্যা সাক্ষ্য দান, মন্দ সুপারিশ এবং অবৈধ ওকালতির অন্তর্ভুক্ত। এসবের মারাত্মক ফলাফলও ভোটদাতার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হবে। তাই ভোট প্রদানের আগে প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কাজের যোগ্যতা রাখে কি-না; সে সৎ ও ধর্মভীরু কি-না; তা যাচাই করে দেখা প্রত্যেক মুসলমান ভোটারের অবশ্য ঈমানি কর্তব্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর