সুন্নতে খতনা আমাদের সমাজে মুসলমানি বলে বহুল পরিচিত। মুসলিম সমাজে এ সংস্কৃতি শত শত বছর ধরে চলে আসছে। যুগে যুগে বড় বড় নবী-রাসুলরা খতনা করেছেন। ইসলামি বিধানে খতনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি ইসলামের মৌলিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ফিতরাত (তথা নবীদের সা. সুন্নত) পাঁচটি- খতনা করা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উঠানো, মোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা।’ -সহিহ বোখারি : ৬২৯৭
সর্বপ্রথম এ সুন্নত পালন করেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। হজরত সাইদ ইবনে মুসাইয়্যাব (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত ইবরাহিম (আ.) হলেন খতনার সুন্নত পালনকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৬৪৬৭
আমাদের দেশে অনেক মা-বাবা মনে করেন, অল্পবয়সে সন্তানের খতনা করানো উচিত। আবার অনেকে অভিভাবক মনে করেন, একটু সময় নিয়ে সাত-আট বছর বয়সে করা উচিত।
খতনা সব ধর্মে নেই। মুসলমান ও ইহুদিরা গুরুত্ব দিয়ে খতনা করে। আবার অনেক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীও খতনা করে থাকেন। খতনার ক্ষেত্রে বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এ কাজে সতর্কতা কাম্য। অভিজ্ঞ হাজাম কিংবা চিকিৎসকদের দিয়ে খতনা করানো দরকার।
ইহুদিরা জন্মের প্রথম দিনই খতনা করে দেয়, অনেকে আবার দ্বিতীয় দিন করে। মুসলিম সমাজে খতনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ের কথা বলা নেই। তবে সাধারণ হিসেবে মনে করা হয়, একটু বয়স হলেই খতনা করানো ভালো।
পুরুষের খতনাকে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত বলে মনে করেন। খতনার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজাতীয় (ব্যাকটেরিয়া) রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
খতনার প্রধান সুবিধা হলো, এর ফলে লিঙ্গের অগ্র ত্বকে তরল জমে যে নোংরা অবস্থার সৃষ্টি করে, তা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। দেড় হাজার বছর আগে নবী কারিম (সা.) খতনার কথা বলেছেন, ব্যাপক গবেষণা শেষে বর্তমান সময়ের আধুনিক বিজ্ঞান স্বীকার করেছে, খতনার ব্যাপক উপকারিতা আছে।
খতনার সুফল নিয়ে অস্ট্রেলীয় মেডিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. ব্রায়ান মরিস গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, যেসব বালকের সারকামসিশন (খতনা) করা হয়নি, তাদের অপেক্ষাকৃত কিডনি, মূত্রথলি ও মূত্রনালির ইনফেকশন চার থেকে ১০ গুণ বেশি হয়।
তিনি মনে করেন, সারকামসিশনের (খতনা) মাধ্যমে অন্তত এক-চতুর্থাংশ মূত্রনালির ইনফেকশন হ্রাস করা যায়।
অন্যদিকে ওয়াশিংটনের সৈনিক মেডিক্যাল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. বিজবেল খতনা নিয়ে বলেন, প্রথম দিকে আমি খতনাবিরোধী ছিলাম, পরে দীর্ঘ গবেষণার ফলে প্রমাণিত হলো যে, মূত্রথলি ও মূত্রনালিবিষয়ক অনেক জটিল রোগের সমাধান হলো খতনা। তাই আমি বলতে পারি, খতনা একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।
শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান হওয়ার পরই সুবিধাজনক সময়ে ছেলে শিশুদের খতনা করিয়ে দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। আর কোনো কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যদি খতনা না করা হয় অথবা বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলেও তার খতনা করা জরুরি।
ইবনে শিহাব যুহরি (রহ.) বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করত তখন সে বড় হলেও তাকে খতনা করার আদেশ করা হত। -আল আদাবুল মুফরাদ : ১২৫২
খতনার উত্তম ও সঠিক সময়ের ব্যাপারে ইসলামি স্কলাররা বলেন, শিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন, ৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম।
আর খতনা উপলক্ষ্যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের নজির বা রীতির প্রমাণ নেই। বর্তমানে খতনা উপলক্ষে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়। এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমিত ইসলাম দেয় না। এ ছাড়া ওই অনুষ্ঠানে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরিয়তবিরোধী কিছু থাকলে তা সম্পূর্ণ নাজায়েজ।