বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের যোগাযোগকে সহজ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করছে মানুষ। এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিক খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া পণ্যের ব্যবসা, কোনো ব্র্যান্ডের প্রচার-প্রসার বাড়ছে এর মাধ্যমে। বলা চলে, এটি আধুনিক যুগের এক বিস্ময়ে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে, সবাই অনলাইন ইন্টারঅ্যাকশনের মন্দ দিক সম্পর্কে জানি। সে হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সময় আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্টে লগ ইন করার সময় এটি একজন মুসলিমের প্রথম চিন্তা হওয়া উচিত। আপনি যে পোষ্ট বা পাতাসমূহ দেখছেন বা মন্তব্য করছেন, তা আপনার কাঁধে থাকা ফেরেশতারা রেকর্ড করছেন৷ লোকেরা যখন অনলাইন ব্যবহার করে অনেকে ভিন্নভাবে আচরণ করে। তারা সেখানে এমন মন্তব্য টাইপ করে যা তারা উচ্চস্বরে উচ্চারণ করার কথা চিন্তাও করবে না। ভার্চুয়াল জগত আর বাস্তব জীবন এক নয়। কিন্তু এটা ব্যবহার করার জন্য আমরা বাধ্য হই। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্তুত পর্যবেক্ষক রয়েছে।’ -সুরা ক্বাফ : ১৮
সুতরাং, যখন আপনি ফেসবুকে কোনো কথাবার্তা বলেন, কোনো কিছু লিখেন, কোনো বিষয়ে মতানৈক্য কিংবা রাগ প্রকাশ করেন- তখন নিশ্চিত করুন যে আপনি সম্মান এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করছেন। এই হাদিসটি সর্বদা মনে রাখুন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষদিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে।’ -সহিহ বোখারি
শুধুমাত্র ফেরেশতারা নোট নিচ্ছেন না, আপনি যা লিখছেন, তা অন্য সবাই পড়ছে। সেখানে আপনি একটি পরিবার বা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং লোকেরা আপনার কাছ থেকে ভালো ও তথ্যবহুল কিছু শিখছে, তাই নিশ্চিত করুন যে আপনি একজন ভালো পরিবার বা সমাজের প্রতিনিধি।
এক কথায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি ভালো ইমেজ বজায় রাখুন। আমরা উপলব্ধি করি বা না করি, আমাদের পছন্দ হোক বা না হোক, আমাদের বিচার করা হচ্ছে। অধিকাংশ অমুসলিম ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য কোরআন-হাদিসের কাছে যান না, তারা আমাদের আচার-আচরণ দেখেন। আপনার কথা এবং কাজ আপনার বিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাই আপনাকে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যা ইসলাম সঙ্গত।
সোশ্যাল মিডিয়া গভীর কিছু সিদ্ধান্তের জায়গা নয়। এখানকার তর্ক কোনো কিছুর সমাধান করে না। উল্টো এখানে ব্যবহৃত কঠোর শব্দ, অন্যদের উপহাস আপনার ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়। অন্যদের ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলে। সুতরাং এসব বিষয়ে কখনও নিজেকে জড়াবেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর কোনো পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী অপর কোনো নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারিনী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরণের আচরণ হতে নিবৃত্ত না হয় তারাই প্রকৃত জালেম।’ -সুরা আল হুজরাত : ১১
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আমাদের এমন আচরণ করতে হবে, যাতে মহান আল্লাহ খুশি হন এবং এটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, ইসলাম কীভাবে আমাদের চরিত্র ও আচার-আচরণকে সুন্দর করে।