পবিত্র কোরআন-হাদিসে এমন বহু আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বান্দার গোনাহ মাফ হয়ে যায়। এখানে এমন কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-
বেশি বেশি সিজদা করা
হজরত মাদান ইবনু আবু ত্বালহা আল-ইয়ামাবি (রহ.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আজাদকৃত গোলাম সাওবানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি কাজের কথা বলে দিন, যা করলে আল্লাহ আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। অথবা আমি তাকে প্রিয় ও পছন্দনীয় কাজের কথা জিজ্ঞেস করলাম। কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তখনো চুপ থাকলেন।
তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেন, তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশি বেশি সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা এক ধাপ বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’-জামে তিরমিজি : ৩৮৮
সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় হওয়া
সৃষ্টিজগতের প্রতি সদয় আচরণ করার দ্বারাও গোনাহ মাফ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে তার ভীষণ পিপাসা লাগল। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও তার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহতায়ালা তার আমল কবুল করেন এবং তার গোনাহ মাফ করে দেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেই নেকি আছে। -সহিহ বোখারি : ২৩৬৩
অজু করে মসজিদে যাওয়া
উত্তমরূপে অজু করার দ্বারা অতীতের পাপরাশি মাফ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা জানাব না, যা করলে আল্লাহ বান্দার গোনাহ ক্ষমা করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আপনি বলুন। তিনি বলেন, কষ্টকর অবস্থায়ও পরিপূর্ণভাবে অজু করা, নামাজের জন্য বেশি পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক (ওয়াক্ত) নামাজের পর আরেক (ওয়াক্ত) নামাজের জন্য অপেক্ষায় থাকা। আর এ কাজগুলোই হলো প্রস্তুতি (রিবাত)। -সহিহ মুসলিম : ৪৭৫
জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়া
জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার দ্বারা গোনাহ মাফ হয়। হজরত উসমান (রা.) বলেন, আমি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে এসে ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে তার গোনাহগুলো ক্ষমা করা হয়। -ইবনু খুজায়মাহ : ১৪৮৯
ভালো কাজ করা
মন্দ কাজ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ভালো কাজ করার দ্বারা গোনাহ মাফ হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সৎ কাজ মুছে ফেলে মন্দ কাজ।’-সুরা হুদ : ১১৪
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আবু জার (রা.)-কে বলেন, তুমি যেখানেই থাকো আল্লাহতায়ালাকে ভয় করো। আর মন্দ কাজের পরপরই ভালো কাজ করো, তাতে মন্দ দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মানুষের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। -জামে তিরমিজি : ১৯৮৭
তওবা করা
তওবার দ্বারা অতীতের পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা নয়, যারা তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ তাদের গোনাহগুলো পরিবর্তন করে দেবেন নেকি দিয়ে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’-সুরা ফুরকান : ৭০
দুঃখ-কষ্টে ধৈর্য ধারণ
মুমিন-মুসলমান বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করলে এর প্রতিদানে তার গোনাহ মাফ হয় এবং পূণ্য লাভ করে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলিম ক্লান্তি, রোগ-ব্যাধি, দুশ্চিন্তা, দুঃখ-কষ্ট পেলে এমনকি তার শরীরে কাঁটাবিদ্ধ হলে আল্লাহ এর মাধ্যমে তার সব গোনাহ ক্ষমা করেন।’-সহিহ বোখারি : ৫৬৪২
এছাড়া জুমার দিন মনোযোগসহ খুতবা শোনা, হজ ও ওমরাহ পালন করা এবং দুই মুসলিমের পরস্পরের মুসাফাহা করার দ্বারাও গোনাহ মাফ হয়।