পবিত্র রমজান মাস চলছে। রমজান যেহেতু বিশেষ মাস, তাই এই রমজান মাস হোক জীবনের শ্রেষ্ঠ রমজান। এ লক্ষে কিছু পরিকল্পনা নিয়ে মাসটি অতিবাহিত করতে হবে। ইসলামি স্কলারদের মতে, ১৫টি কাজের মাধ্যমে মাহে রমজানকে বিশেষ মাসে পরিণত করা যায়, সেগুলো হলো-
১. প্রতিদিন অন্তত ৪ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা এবং কিছু সময় আন্তরিকভাবে দোয়া-মোনাজাতে কাটানো। শেষ রাতের দোয়, তওবা ও ইস্তেগফার আল্লাহতায়ালার কাছে অত্যন্ত প্রিয়।
২. সারা মাসে কমপক্ষে একবার কোরআন মাজিদ পড়ে শেষ করবো। বিশেষভাবে রাতের বেলা কিছু সময় তেলাওয়াত করবো। রাতের তেলাওয়াতের মর্যাদা অনেক বেশি।
৩. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে (ওয়াক্তের শুরুতেই) পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে আদায় করবো। পুরুষরা অবশ্যই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করবো। ধীরে-সুস্থে তারাবি পড়বো। বাসায় তারাবি পড়লে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতের সঙ্গে পড়বো এবং নারীদেরকেও শামিল রাখার চেষ্টা করবো। তাদের কাতার হবে সবার শেষে। নারীদের কাতারে কোনো পুরুষ থাকবে না।
৪. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবো। বিশেষত রোজা অবস্থায় চোখ, কান এবং জিহ্বা দিয়ে কোনো ছোট গুনাহও করবো না।
৫. প্রয়োজন ব্যতীত অনলাইনে আসবো না। কারণ অনলাইন হলো গুনাহের মহাসমুদ্র। ইউটিউব, ফেইসবুক, টিকটকে ডুবে যাবো না।
৬. সারা মাসে অন্তত একবার আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবো অথবা ফোন করে খোঁজ-খবর নেবো। আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরজগুলোর একটি।
৭. প্রতিদিন অন্তত ২/৩ ঘণ্টা সময় কোরআন তেলাওয়াত, হেফজ এবং কোরআনের অর্থ ও তাফসির পাঠে ব্যয় করবো। সম্ভব হলে সম্মিলিতভাবেও এই কাজটি করা যায়। কোরআন এবং রমজান একই সূত্রে গাঁথা।
৮. সাধ্যানুযায়ী পুরো মাসজুড়ে অসহায় ও দরিদ্রদের দান-সদকা করবো। এক্ষেত্রে আত্মীয়দের প্রাধান্য দেবো। এটিই ইসলামের নির্দেশনা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এমন অনেক পরিবার খাদ্যসংকটে আছে, যারা লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততে পারে না; তাদেরকে খুঁজে বের করে সাধ্যানুযায়ী সাহায্য করবো। এটি বিরাট নেকির কাজ হবে। বিশেষ করে তাদের সেহরি ও ইফতারের খোঁজ নেবো।
৯. মনের সংকীর্ণতা দূর করে উদারচিত্তে সবাইকে ক্ষমা করে দেবো। বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন। কোরআন ও হাদিসে এই ওয়াদা আছে।
১০. রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগিতে ডুবে যাবো এবং লাইলাতুল কদর তালাশ করবো, শুধু ২৭তম রাতে নয়, শেষ দশকের প্রতিটি রাতেই; বিশেষত বেজোড় রাতগুলোতে।
১১. সেহরি ও ইফতারে খাবারের অপচয় করবো না এবং খাবার নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা, কথাবার্তা ও হৈ-হুল্লোড় করবো না। খাবার তৈরিতে বাসার নারীদের যথাসাধ্য সহযোগিতা করবো এবং কোনো খাবার পছন্দ না হলে মেজাজ দেখাবো না। কেউ ইচ্ছা করে খাবার বিস্বাদ করে না। সবাই সাধ্যানুসারে ভালো করারই চেষ্টা করে। কারণ যে রাঁধে, সে নিজেও সেই খাবার খায়।
১২. নামাজের পর, সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগে-পরের সুন্নত জিকিরগুলো গুরুত্বের সঙ্গে পড়বো। বিশেষ করে, আয়াতুল কুরসি ও ৩ তাসবিহ নিয়মিত আদায় করবো। পাশাপাশি নফল নামাজে অভ্যস্ত হবো। প্রতিদিন অন্তত ৪ রাকাত আদায় করবো।
১৩. সারা মাস তওবা-ইস্তিগফারে লেগে থাকবো। সেহরি ও ইফতারের সময় দোয়ায় কিছু সময় কাটাবো। এ দুটো সময়ে দোয়া কবুল হয়। রমজানে মুমিনের প্রধান কাজ হলো, নিজের গুনাহগুলো মাফ করানো। তাই, এটিই হোক আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
১৪. আমরা যারা গিবত, গান শোনা, নাটক-মুভি দেখা, পর্নোগ্রাফি, কুদৃষ্টি, কুধারণা, লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার এবং অন্যান্য গুনাহ থেকে বের হতে পারছি না, বরং এগুলো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তারা রমজানের দীর্ঘ এক মাসের কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের সংশোধন করে নিতে পারি। যারা অনলাইন গেইম এবং খেলা দেখায় আসক্ত, তারাও নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি। দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, কঠোর সাধনা এবং দোয়া-কান্নাকাটির মাধ্যমে আমরা আমাদের বদঅভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে পারবো- ইনশাআল্লাহ।
১৫. এই রমজানই হতে পারে অনেকের জীবনের শেষ রমজান। তাই, হাসি-ঠাট্টা, ফূর্তিবাজি ও গতানুগতিক উদ্দেশ্যহীন জীবনযাপন বাদ দিয়ে যথাসাধ্য তাকওয়া, বিনয় ও গাম্ভীর্যের সঙ্গে এমনভাবে মাসটি কাটাবো, যেন সবাই আমরা মৃত্যুপথযাত্রী। এই অনুভূতি ধারণ করে রমজানের মহামূল্যবান সময়গুলো কাজে লাগাবো।
আল্লাহতায়ালা বিষয়গুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দিন, আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করুন এবং তার সন্তুষ্টির ওপর মৃত্যু দিয়ে কবরবাসী করুন। আমিন।