ইউরোপের অন্যতম শিল্পোন্নত দেশ জার্মানি। দেশটির সামরিক বাহিনীতে তিন হাজারের মতো মুসলিম সেনা রয়েছে। সেনাবাহিনীর মুসলিম সদস্যরা এতদিন খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের মতো ‘পাস্টোরাল কেয়ার’ বা প্রয়োজনে নিজ ধর্মের বিশ্বাসী ধর্মীয় শিক্ষকের সহায়তা নেওয়ার সুযোগ পাননি। এক সময় অবিশ্বাস্য শোনালেও এখন সেই অবস্থায় পরিবর্তন আসছে। জার্মান সেনাবাহিনীতে মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষক বা ধর্মগুরু নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জার্মান সশস্ত্র বাহিনীর সংসদীয় কমিশনার এফা হ্যোগল সেনাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তিনি তার তৃতীয় বাৎসরিক প্রতিবেদনে মুসলমানদের জন্যও ‘মিলিটারি চাপল্যান্সি’ বা ধর্মীয় শিক্ষকের সহায়তার দিককে গুরুত্ব দেন। অতীতে যে দলই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিল, তারা বিষয়টিকে অসম্ভব মনে করেছিল। ফলে বছরের পর বছর জার্মান সামরিক বাহিনীতে মুসলিম ধর্মগুরুদের সেবা দিতে দেখা যায়নি।
মধ্যবাম সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডির হ্যোগল এই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে চান। তিনি মনে করেন যে, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী সেনাদের জন্য এটা না থাকাটা খুবই অসন্তোষজনক ব্যাপার। তাই তিনি দ্রুত এক্ষেত্রে যোগ্যদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
হ্যোগল গত বছর দক্ষিণপূর্ব তুরস্কে ভূমিকম্পের পর জার্মান সেনাদের সেখানে উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার কথা স্মরণ করেন। সেখানে মোতায়েন করা সেনাদের মধ্যে মুসলমান সেনারাও ছিলেন। তা সত্ত্বেও সেখানে দুই অমুসলিম সামরিক ধর্মগুরু ‘পাস্টোরাল কেয়ার’ দিয়েছেন।
ডয়চে ভেলের এক প্রশ্নের জবাবে জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ২০২৩ সাল অবধি প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বেশ কয়েকবছর ধরেই মুসলিম সেনাদের জন্য আলাদা ‘পাস্টোরাল কেয়ার’ চালুর বিষয়টি জার্মান সামরিক বাহিনীতে আলোচিত হয়েছে। ক্যাথলিক এবং ইহুদি সামরিক ধর্মগুরুরাও এই প্রয়োজনীয়তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং নরওয়ের সামরিক বাহিনীতে মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষক রয়েছেন। তাদের অধিকাংশের সামরিক ইমামও রয়েছে। জার্মানিতে এক্ষেত্রে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় ঘাটতি আছে কারণ এদেশে এমন কোনো সংগঠন নেই যেটি সব ইসলামি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।
সেই তুলনায় ২০১৯ সালে জার্মানির ‘সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব জিউস’-এর সহায়তায় জার্মান সামরিক বাহিনীতে ইহুদি সামরিক ধর্মীয় সেবা চালু করা হয়। কাউন্সিলটি সব ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। জার্মান সামরিক বাহিনীতে ৫ শতাধিক ইহুদি সেনা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন যে, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে সামরিক বাহিনীতে মুসলমানদের জন্য ‘পাস্টোরাল কেয়ার’ চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। খুব দ্রুত এই প্রক্রিয়া শেষ হয়ে নিয়োগ কাজ সমাপ্ত হবে।