রমজান মাসের বিশেষ মর্যাদার অন্যতম দিক ‘লাইলাতুল কদর’ বা কদরের রাত, যার অপর নাম শবেকদর। আল্লাহতায়ালা মহিমান্বিত এই রাতে কোরআন নাজিল করেছেন এবং রাতকে হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাবান ঘোষণা করেছেন।
লাইলাতুল কদরের মর্যাদা
কোরআন মাজিদের আয়াত ও বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা শবেকদর বা কদরের রাতের মর্যাদা প্রমাণিত। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কাছে এ মাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৪৪
লাইলাতুল কদর কবে?
বেশিরভাগ হাদিস বিশারদের মতে, লাইলাতুল কদর বা কদর রাত রমজানের শেষ দশকে রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিসে ছয় ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা আবশ্যক। কেউ যদি তাতে অক্ষম হয়, তবে সে যেন শেষ তিন বিজোড় রাতে (২৫, ২৭, ২৯) আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করে। আর তা-ও যদি সম্ভব না হয়, তবে সে যেন ২৭ রমজানের রাতে তা অনুসন্ধান করে।
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ -সহিহ বোখারি : ২০১৭
লাইলাতুল কদরের নিদর্শন
বিশুদ্ধ হাদিসে লাইলাতুল কদরের নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে। হজরত উবাই বিন কাব (রা.) তিনি দৃঢ় শপথ করে বললেন, তা (লাইলাতুল কদর) রমজানের ২৭তম রজনী। অতঃপর তিনি মহানবী (সা.)-কে উদ্ধৃত করে বলেন, সেদিনের নিদর্শন হলো, সেদিন সূর্যোদয় হবে; কিন্তু তাতে আলোকরশ্মি থাকবে না। -সহিহ মুসলিম : ২৬৬৭
‘কদর’ অনুসন্ধানে চার আমল
হাদিসের আলোকে ‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধানে চারটি আমলের কথা বলেছেন। তা হলো-
ভেতর ও বাইরের পবিত্রতা : লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত ভেতর ও বাইরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া। আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলি বলেন, ‘উত্তম হলো যে রাতে কদর অনুসন্ধান করা হবে, তাতে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, গোসল-সুগন্ধি-উত্তম কাপড়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন করা। আর বাহ্যিক সৌন্দর্য সৌন্দর্যের জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না মানুষের ভেতরটা সুন্দর হয়। মানুষের ভেতর সুন্দর হয় তাওবা ও আল্লাহমুখী হওয়ার মাধ্যমে।’ -লাতায়িফুল মাআরিফ : ১৮৯
রাতে নামাজ ও ইবাদত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কদরের রাতে ইবাদত ও নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত জাগবে, তার আগের গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৫
ক্ষমাপ্রার্থনা : হজরত আয়েশা (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, ‘তুমি বলো, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, দয়ালু, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ -সুনানে তিরমিজি : ৩৫১৩
প্রতিটি বেজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা : লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে শেষ দশকের প্রতিটি বেজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা উত্তম। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ -সহিহ বোখারি : ২০১৭