তাকওয়া হলো- সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা হারানোর ভয়। আল্লাহর অসন্তোষের ভয়। প্রকৃত মুমিন তাকওয়া দ্বারাই পরিচালিত হন। তাকওয়া মানুষকে পাপ থেকে দূরে রাখে এবং সৎ কাজে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা যারা ইমান এনেছো, তারা তাকওয়া অর্জন করো।’ -সুরা আহজাব : ৭০
কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যারা ইমান আনল এবং তাকওয়া অর্জন করল, তারা আল্লাহর বন্ধু; তাদের কোনো ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না।’ -সুরা ইউনুস : ৬২
ক্ষুধা-পিপাসার দহনজ্বালায় নফসকে দাহ করে পরিশুদ্ধ করা রোজার মূল লক্ষ্য। এটিই কোরআনের ভাষায় তাকওয়া বা খোদাভীতি। রমজান মাস শেষ পর্যায়ে, এই সময়ের মধ্যে সেই লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হলো, সেটা চিন্তার বিষয়।
তাকওয়া অত্যন্ত মূল্যবান মানবীয় গুণ, দ্বীনের প্রাণশক্তি এবং কাঙ্ক্ষিত সব গুণের অনুপ্রেরণা। এটি এমন জিনিস, যার মাধ্যমে সত্যের পথ পাওয়া যায়। পবিত্র কোরআনে ‘তাকওয়া’ শব্দটি এসেছে ১৫ বার। এটি দৃশ্যমান বস্তু নয়, অন্তরের বিষয়। তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ বাঁচা, রক্ষা করা, দূরে থাকা, বিরত থাকা ও সাবধান থাকা ইত্যাদি।
তাকওয়া অবলম্বনকারীকে বলা হয় মুত্তাকি। রোজার সঙ্গে রয়েছে তাকওয়ার নিবিড় যোগসূত্র। রোজা মানুষের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি সৃষ্টি করে। তাকওয়ার গুণের কারণে বান্দা আরও যেসব প্রতিদান পান, তার অন্যতম হলো-
এক. তাকওয়ার গুণের কারণে বান্দা আল্লাহর সুমহান প্রতিদান লাভ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে এবং তাকওয়া অর্জন করে, তাদের জন্য রয়েছে সুমহান প্রতিদান।’ -সুরা আলে ইমরান : ১৭২
দুই. আল্লাহতায়ালার বন্ধুত্বের মতো অমূল্য জিনিস তাকওয়ার মাধ্যমে অর্জিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ মুত্তাকিদের বন্ধু।’ -সুরা জাসিয়া : ১৯
তিন. তাকওয়ার কারণে পাপমুক্তি ঘটে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং বিরাট প্রতিদানে ভূষিত করবেন।’ -সুরা তালাক : ৫
চার. মুত্তাকির জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি আহলে কিতাব গোষ্ঠী ইমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি তাদের থেকে পাপসমূহ দূর করে দিতাম আর অবশ্যই তাদের নেয়ামতে ভরা জান্নাতে প্রবেশ করাতাম।’ -সুরা মায়েদা : ৬৫
পাঁচ. তাকওয়ার গুণ মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে জাহান্নাম অতিক্রম করবে না। এ তো একটা স্থিরকৃত ব্যাপার, যা সম্পন্ন করা তোমার রবের দায়িত্ব। তারপর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের আমি বাঁচিয়ে নেব এবং জালেমদের তার মধ্যে নিক্ষিপ্ত অবস্থায় রেখে দেব।’ -সুরা মারইয়াম : ৭১-৭২