আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাওয়ার তাগাদার পাশাপাশি অনেকেই ঈদের প্রস্তুতি (নতুন কাপড় কেনা, খাবারের আয়োজন ও মার্কেটে ঘোরাঘুরি করা) নিতে গিয়ে রমজানের শেষ দশ দিন অবহেলায় পালন করেন। ঠিকমতো ইবাদত-বন্দেগি পালন করেন না, লাইলাতুল কদরের তালাশ করেন না। অনেকে তো কেনাকাটার চাপে রোজাও রাখতে পারেন না। রোজা রাখলেও মার্কেটে মার্কেটে ঘুরাঘুরির চাপে ক্লান্ত হয়ে রোজা ভেঙে ফেলেন। এগুলো কঠিন গোনাহের কাজ।
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন আল্লাহর ইবাদতে খুব বেশি সময় নিমগ্ন থাকতেন। আমাদেরও তা করা উচিত। কেনাকাটা কিংবা ঈদের প্রস্তুতিতে বেশি সময় ব্যয় না করে ইবাদত-বন্দেগিতে সময় বেশি কাটানো।
ইসলামি স্কলাররা পরামর্শ দিয়েছেন, রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করে ফেলা। রমজান মাসটি নিরবচ্ছিন্নভাবে শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানো। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘যখন রমজানের শেষ দশক শুরু হতো হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি শক্ত করে বাঁধতেন অর্থাৎ ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন, স্ত্রীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া থেকে বিরত থাকতেন, রাত জাগরণ করতেন এবং তার পরিবারকে জাগিয়ে তুলতেন।’ -সহিহ্ বোখারি ও মুসলিম
ঈদের প্রস্তুতি
ইসলামে বাৎসরিক জাতীয় উৎসব দুটি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে ঈদ উদযাপন করুন। ঈদের নামাজের আগেই ফিতরা আদায় করুন। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। ঈদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কেনা জরুরি নয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাই যথেষ্ট। অপচয় করবেন না। গরিব আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের শিশুদের ঈদের পোশাক ও উপহার দিন। ঈদ উপলক্ষ্যে গান-বাদ্য, অশ্লীলতা, হারাম নাটক ও সিনেমা না দেখার প্রতিজ্ঞা করুন। সুন্নাহসম্মত পদ্ধতিতে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করুন। যথা- তাকব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম। অর্থাৎ আল্লাহ আপনার ও আমার (রমজানে কৃত) সব ভালো কাজ কবুল করুন।
ঈদের দিনের সুন্নত
অন্যদিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া, মিসওয়াক করা; গোসল করা; শরিয়তসম্মত সাজসজ্জা করা; সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা; সুগন্ধি ব্যবহার করা; ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টি-জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আজহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাজের পর নিজের কোরবানির গোশত আহার করা উত্তম।
সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া; ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা, একান্ত বাধ্য না হলে মসজিদে আদায় না করা; যে রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাবে, সম্ভব হলে ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা; পায়ে হেঁটে যাওয়া; ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় নীরবে এই তাকবির পড়তে থাকা- ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ তবে ঈদুল আজহায় যাওয়ার সময় পথে এ তাকবির সরবে পড়তে থাকবেন।