মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ৩ সপ্তাহের প্রচেষ্টায় নিজেদের ভালো অভ্যাস গঠনে তৈরি করতে পারে। কোনো মানুষ যদি নিয়মিত ভালো কাজ করে তবে সে নিয়মিত কাজের একটি অভ্যাস তার মধ্যে তৈরি হয়। যেমন- নিয়মিত নামাজ পড়লে নামাজের অভ্যাস তৈরি হয়, রোজা রাখলে রোজাপালনের অভ্যাস তৈরি হয়; আবার মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্যধারণ করলে তাও তৈরি হয়। আর মুমিন-মুসলমানের এসব অভ্যাস তৈরিতে রমজান কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
রমজানে যে ব্যক্তি নিয়মিত রোজা রাখে, নামাজ আদায় করে, ধৈর্যধারণ করে- আল্লাহর ইচ্ছায় ওই ব্যক্তির মাঝে ভালো অভ্যাসগুলো তৈরি হয়। আবার রমজানের পরে অনেকেই সেসব ভালো গুণ থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু উচিৎ ছিলো, গুণগুলো ধরে রাখা। রমজানে অর্জিত ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার রয়েছে বেশ কিছু উপায়। সেগুলো হলো-
সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালন
রমজানের পর প্রত্যেক সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালনের চেষ্টা করা। তাতে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ হয়। রোজা মানুষকে শুধু আধ্যাত্মিক উপকারই দেয় না বরং তাতে শারীরিক স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারও রয়েছে।
স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা যায়, রোজাপালন মানুষের শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারি। রোজায় মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘুম, মনোযোগ ও শারীরিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। নার্ভের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়।
আর সপ্তাহে ২ দিন রোজাপালন সুন্নতের অনুসরণও বটে। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সপ্তাহে ২ দিন (সোম ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মানুষের কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে পৌছানো হয়। আর আমি এটি ভালোবাসি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার কাজে হিসাব পৌছানো হোক।’ -জামে তিরমিজি
দান-সদকা অব্যাহত রাখা
দানের অভ্যাস অব্যাহত রাখা। কেননা দান-সহযোগিতা মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়। রমজানে যেভাবে বেশি সওয়াব লাভের আশায় মানুষ দান-সদকা করে, রমজান পরবর্তী সময়েও গরিবদের দান-সদকার অভ্যাস চালু রাখা।
দানের কার্যকারিতা শুধু আখেরাতে নয়, বরং দুনিয়াতেও লাভ হয়। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দান-সাদকা মানুষের বিপদ-আপদ দূর করে দেয়।’ দান-সদকার ফলে সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষ সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে। তাতে পাস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সুন্দর সমাজ তৈরি হয়।
নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত
রমজানের পরে নির্ধারিত একটি সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি রাখা। যেভাবে রমজান মাসে মানুষ নির্ধারিত সময়ে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে।
কোরআন তেলাওয়াত মানুষের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য সহায়ক। এটা উত্তম ইবাদতও বটে। কোরআন পরকালে শুধু তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশই করবে না বরং দুনিয়াতে অনেক অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।
অর্থসহ কোরআন মাজিদ পড়া
রমজানের পর সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোরআন অধ্যয়ন তথা অর্থসহ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পড়া। রমজানের পরে কোরআন বুঝার নিয়মিত চেষ্টা অব্যাহত রাখলে, একটা সময় কোরআন বুঝা সহজ হয়ে যাবে। আর সে আলোকে গড়ে ওঠবে মানুষ জীবন।
কোরআনে কারিমের জ্ঞান বাস্তবায়ন
রমজান মাসে কোরআনের যেসব জ্ঞান অর্জন করেছে মানুষ। রমজানের পরেও তা যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। কোরআনে কারিমের সব ঘটনাগুলোই অর্থবহ এবং পরিপূর্ণ। কোরআনের সে ঘটনাগুলোর আলোকেই নিজেদের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।
যখনই কোরআনের কোনো ঘটনা বা জ্ঞান অর্জন হয়, তখনই সে ঘটনা বা গুণ দিয়ে নিজেকে মূল্যয়ন করুন। যদি তা থেকে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। আর সে গুণ না থাকলে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা।
দোয়া করা
কোরআনের অনেক ঘটনায় দোয়ার কথা এসেছে। কল্যাণ লাভে দোয়ার রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। রমজান মাসে দোয়া যেভাবে মানুষের কার্যতালিকা থেকে বাদ যায়নি। রমজান পরবর্তী সময়েও তা অব্যাহত রাখা জরুরি। কেননা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’
আল্লাহতায়ালা প্রতিদিনই মানুষকে ডেকে ডেকে বলেন, তার কাছে দোয়া করার জন্য। নিজের গোনাহ মাফের আহ্বান করেন, রিজিক চাওয়ার আহ্বান করেন। সুতরাং যারা রমজানের পরেই আল্লাহর কাছে নিয়মিত দিনে-রাতে দোয়ার অভ্যাস গঠন করবে, তারাই সফলকাম হবে।
ভালো কাজে আগ্রহী হওয়া
প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ভালো অভ্যাস গঠনে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করা। একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। কারো মাঝে অন্যায় বা খারাপ আচরণ থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকতে ভালো কাজ বা গুণের পরামর্শ দেওয়া। একে অপরকে নিয়মিত ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা।
ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিতে একটি গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে প্রতিদিনই নির্ধারিত একটা সময় ভালো কাজের আলোচনা হতে পারে। হতে পারে তা কোরআন শিক্ষা বা গবেষণার আসর।
প্রতিদিন নিজেকে মূল্যয়ন করা
প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিয়মিত নিজের কাজের মূল্যয়ন করা। আর তাতে ভেসে উঠবে ভালো ও মন্দ কাজ প্রতিচ্ছবি। নিজেকে মূল্যয়নে কোরআনে সে আয়াতটি বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। তাহলো, ‘তোমার কিতাব (কাজের হিসাব) পাঠ কর। আজ তোমার হিসাব (কাজের মূল্যয়ন) গ্রহণে তুমিই যথেষ্ট।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ১৪
প্রতিদিন নিজের কাজের মূল্যয়ন অব্যাহত রাখলে গোনাহমুক্ত জীবন লাভ সম্ভব হবে। পরকালে নিজেদের কাজের হিসাব প্রদানও হবে সহজ। আর তাতেই আলোকিত জীবন লাভ করবে মুমিন।