পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বাংলাদেশ থেকে আগামী মাসের ৯ মে থেকে হজফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজযাত্রী। অথচ এখনও সৌদি আরবে হাজিদের বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হয়নি।
এমনকি হজযাত্রীদের মীনায় অবস্থানের জায়গা (তাঁবু) এবং সার্ভিস প্রোভাইডার (সৌদি আরবের মোয়াল্লিম) এখনও নির্ধারণ হয়নি। প্রকাশ করা হয়নি চূড়ান্ত ফ্লাইট সিডিউল। এসব কারণে হজ এজেন্সি কর্তৃপক্ষ সৌদি আরবে হাজিদের বাড়ি ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতির জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব)।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) রাতে ‘হজ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম এসব কথা বলেন। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারস ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা সভায় সারাদেশের হজ এজেন্সির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
সভায় হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছি। কোনো হাজি যেন হজে গিয়ে কষ্ট না পান, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হাব সভাপতি বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা স্থায়ী না, তারা দুই-তিন বছর পরপর বদলি হন, হজের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে তাদের স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। তাদের কারণে হজ ব্যবস্থাপনা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক তা আমরা চাই না।’
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা হজ ব্যবস্থাপনায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে পরামর্শ করেন না বলেও অভিযোগ হাবের। এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, ‘হজ ব্যবস্থাপনা আবার চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। আমরা আগেই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম, হজ ব্যবস্থাপনা এ বছর চ্যালেঞ্জিং হবে। এজেন্সি কোটা সর্বনিম্ন ১০০ জন রাখতে আমরা অনুরোধ করেছিলাম। ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর সংখ্যা কমাতে অনাগ্রহী হয়। সর্বোচ্চ এজেন্সি কোটা ৩০০ থাকা স্বত্বেও কি কারণে ৫০০ জন করা হলো তা বোধগম্য নয়। ধর্মমন্ত্রী এজেন্সি প্রতি ৪০০ জন কোটা রাখার নির্দেশনা দেওয়া স্বত্বেও ধর্ম সচিব ৫০০ জন কোটা নির্ধারণ করলেন। কেন করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
হাব সভাপতি বলেন, ‘সৌদি সরকার ৫৬ এজেন্সির মাধ্যমে হজ কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিলেও আমরা তার বিরোধিতা করেছিলাম। কারণ এজেন্সিতে যাত্রীসংখ্যা বেশি হলে সব যাত্রীকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বৃদ্ধ হাজিদের জন্য সঠিকভাবে সেবা প্রাপ্তিতে বিঘ্ন ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের ভূমিকা যথার্থ ছিল না।’
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারণে এখনও সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। প্রতি বছর প্রতিনিধিদের সৌদি যেতে মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। পরিচালক হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনও হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশন আছে। জেদ্দা কনসাল জেনারেল (হজ) আছেন, তারা চাইলেই সৌদি আরবে সরকারি নিবন্ধিত হাজিদের বাড়ি ভাড়া করতে পারেন। তারপরও ধর্ম সচিবের নেতৃত্বে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে লোকবল নিয়ে দীর্ঘদিন সৌদি আরবে অবস্থান সরকারিভাবে বাড়ি ভাড়া করা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি এজেন্সির বাড়ি ভাড়া জন্য সৌদি যেতে ভিসার ব্যবস্থা করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সি প্রতিনিধিরা সৌদি যেতে না পারলে বিশাল সংখ্যক হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া কীভাবে সম্ভব?’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর দেশ থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের সৌদি নেওয়া হয় হজে সহায়তাকারী হিসেবে। এতে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো সহায়তাকারী নেওয়া হবে না। সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু অজানা কারণে বাংলাদেশ থেকে হজ সহায়তাকারী নেওয়া হচ্ছে।’
হাব সভাপতি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা কখনও বেসরকারি হজযাত্রীদের খোঁজ-খবরও নেন না। সরকারি চার-পাঁচ হাজার হাজির জন্য এই বিশাল সংখ্যক জনবল দেশ থেকে নেওয়া দেশের অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। সব চেয়ে বেশি হাজি যায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে, তাদের জন্য সহায়তাকারী বেশি প্রয়োজন। তাই সহায়তাকারী হিসেবে হজ এজেন্সিকে ভিসা সুবিধা নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হজ ব্যবস্থাপনা চ্যালেঞ্জের মুখে। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে হাব এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিল। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। হজযাত্রীদের কল্যাণে সুশৃঙ্খল হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।’
সভায় উপস্থিত ছিলেন- হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী, সহ-সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, মহাসচিব ফারুক আহমদ সরদার, জনসংযোগ সচিব মুফতি মুহাম্মদ জুনায়েদ গুলজার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, চলতি বছর বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮টি কোটা নির্ধারণ করেছিল সৌদি আরব। কিন্তু কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও হজের নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়নি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে গাইড ও মোনাজ্জেমসহ হজপালনে সৌদি আরব যাবেন ৮৫ হাজার ২৫৭ জন।