গোনাহ হয়ে গেলে করণীয়

আমল, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-06-30 17:52:08

পৃথিবীর কোনো মানুষই চায় না- তার জীবনে ব্যর্থতা নেমে আসুক। চায় না- তাকে দুঃখ স্পর্শ করুক কিংবা স্পর্শ করুক হতাশা ও দুশ্চিন্তা। কিন্তু অমোঘ বাস্তবতা রুখবে কে? তাই সফলতার পাশাপাশি মানুষকে ব্যর্থতাও দেখতে হয়। সুখের সঙ্গে মেনে নিতে হয় দুঃখকেও। না চাইলেও সয়ে যেতে হয় দুর্দশা ও দুশ্চিন্তা।

জীবনের এসব ক্ষেত্রে মানুষ সবসময়ই যে নীতি-আদর্শে অবিচল থাকতে পারে- এমন নয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে সে সরে যায় করণীয় থেকে। লিপ্ত হয়ে পড়ে নিষিদ্ধ কিংবা অনুচিত নানা কাজে। এক্ষেত্রে মানুষের স্বভাব দুর্বলতা তো আছেই। আরও আছে উদাসীনতা ও অবহেলা, প্রবৃত্তি ও মন্দপ্রবণতা, আছে দৃঢ়তা ও অবিচলতার অভাব। উপরন্তু ইবলিস শয়তান তো আছেই। আছে তার ওয়াসওয়াসা ও কুমন্ত্রণতা।

মানুষের এসব অবস্থা, স্বভাবজাত দুর্বলতা, অবহেলা, মন্দপ্রবণতা ও শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা খুব ভালোভাবেই জানেন তিনি, যিনি সবার সৃষ্টিকর্তা ও স্রষ্টা এবং মালিক ও সর্বাধিকারী। তাই খুব সহজ ও সুন্দর প্রতিবিধানের ব্যবস্থা রেখেছেন তিনি। দিয়েছেন উদ্ধারকারী সহজ মাধ্যম এবং প্রতিষেধমূলক সহজ প্রক্রিয়া। তা হলো- গোনাহের প্রতিবিধানে তওবা করা।

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত গোনাহের প্রতিবিধান সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে কেউ কোনো মন্দ কাজ করবে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করবে, তারপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে- সে আল্লাহকে পাবে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা নিসা : ১১০

এখানে মন্দ কাজ তথা ছোট ছোট গোনাহ এবং নিজের প্রতি জুলুম তথা বড় ধরনের গোনাহ- উভয়টির ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে ইস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার কথা। বলা হয়েছে, ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে পাবে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। অর্থাৎ বান্দা কোনো ভুল, অপরাধ বা সীমালঙ্ঘন করলেও তার প্রতি তিনি অত্যন্ত দয়ার আচরণ করেন। ক্ষমাগুণ প্রকাশ করেন। তাই দৃঢ় আশা করা যায় যে, তিনি বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।

বাস্তবে সুস্থ বিবেকের অধিকারী কোনো মানুষই চায় না খারাপ হতে। চায় না মন্দ কাজ করতে কিংবা অপরাধী হতে। কিন্তু মানুষের স্বভাবজাত দুর্বলতা, আত্মনিয়ন্ত্রণে শিথিলতা এবং নফস ও শয়তানের প্রবঞ্চনা তাকে এসবে লিপ্ত করে ফেলে। তাছাড়া দুনিয়া যেহেতু পরীক্ষার জায়গা, এখানে ভালো ও মন্দ উভয় কাজের শক্তি দিয়ে মানুষকে পাঠানো হয়েছে। এরপর ভালো ও নেক কাজে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। মন্দ ও গোনাহের কাজে ঘোষণা করা হয়েছে শাস্তি। সেই শাস্তি থেকেই বাঁচার উপায় হলো- তওবা ও ইস্তেগফার।

অন্য একটি আয়াতে আরও উদারব্যপ্ত ঘোষণা এসেছে। এসেছে অভয় ও আশ্বাসবাণী। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আপনি বলে দিন, হে আমার সেই বান্দারা! যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গোনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা যুমার : ৫৩

গোনাহ হয়ে গেছে! নিজের প্রতি অবিচার করেছ! সীমালঙ্ঘন করেছ! তবু নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এমন অভয় ও আশ্বাসবাণী পাওয়ার পর একজন মুমিনের হৃদয়ে কী আস্থা ও শক্তি অনুভূত হয় তা খুব সহজেই অনুমেয়।

শুধু তাই নয়। তওবা ও ইস্তেগফারের প্রতি তিনি আলাদাভাবেও উৎসাহ দিয়েছেন। নির্দেশ করেছেন ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং দ্রুত অগ্রসর হও তোমার রবের ক্ষমার দিকে এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও জমিনের (প্রশস্ততার) ন্যায়। যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য।’ -সূরা আলে ইমরান : ১৩৩

অর্থাৎ যদি আল্লাহতায়ালার ক্ষমা লাভ করতে পার এবং যদি আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানী জুটে যায় তাহলে সেই জান্নাত পেতে পার, যার প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও জমিনের (প্রশস্ততার) ন্যায়। যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য। মোটকথা, আল্লাহর ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল তওবা। আর সেটা তো মুত্তাকিদেরই পরিচয়-বৈশিষ্ট্য।

তওবা-ইস্তেগফারের বিভিন্ন ফায়েদার কথাও উল্লেখিত হয়েছে কোরআন মাজিদে। যেমন হজরত নুহ আলাইহিস সালামের ভাষায় ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি বলেছি, তোমরা আপন রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন। তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যানরাজি আর তোমাদের জন্য প্রবাহিত করবেন নদ-নদী।’ -সূরা নুহ : ১০-১২

অর্থাৎ ইস্তেগফার ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে এসব বিষয় লাভ হবে। আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করবেন। আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন এবং বাগ-বাগিচা ও নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন।

স্পষ্ট কথা হলো- এগুলোর প্রত্যেকটিই এমন, যা ছাড়া মানুষের জীবন ও জগৎ প্রায় অচল। সেগুলোই খুব সহজে লাভ হতে পারে ইস্তেগফারের মাধ্যমে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর