আশুরার দিনে পৃথিবীতে এমন একটি ঘটনার অবতারণা হয়েছিল যার বিবরণ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এভাবে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর (স্মরণ করো) সে সময়ের কথা, যখন আমি তোমাদেরকে মুক্তি দান করেছি ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে যারা তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি দান করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদের জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদের অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ তাতে পরীক্ষা ছিল তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।’ ‘আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফেরাউনের লোকদেরকে অথচ তোমরা দেখছিলে।’ -সূরা বাকারা : ৪৯-৫০
তাফসিরের কিতাবে লেখা হয়েছে, কোনো এক ব্যক্তি ফেরাউনের কাছে এসে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, ইসরায়েল বংশে এমন এক ছেলের জন্ম হবে, যার হাতে তোমার রাজ্যের পতন ঘটবে। এ জন্য ফেরাউন নবজাত পুত্রসন্তানদের হত্যা করতে আরম্ভ করলো। আর যেহেতু মেয়েদের দিক থেকে কোনো রকম আশংকা ছিল না, সুতরাং তাদের সম্পর্কে নিশ্চুপ রইলো। দ্বিতীয়তঃ এতে তার নিজস্ব একটি মতলব ছিল যে, সে স্ত্রীলোকদেরকে দিয়ে ধাত্রী ও পরিচারিকার কাজ করানো যাবে। সুতরাং এ অনুকম্পাও ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
আলেমরা বলেছেন, ফেরাউনের বংশধর- বলতে কেবল ফেরাউনের পরিবারের লোকদেরকেই বুঝানো হয়নি, বরং তার অর্থ ফেরাউনের সব অনুসারী। যেমন পরের আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ফেরাউনের অনুসারীদেরকে (সমুদ্রে) ডুবিয়ে দিলাম।’ এখানে যারা ডুবেছিল তারা কেবল ফেরাউনের পরিবারেরই লোকজন ছিল না, বরং তার সৈন্য ও অন্যান্য অনুসারীরাও ছিল।
এখানে কিভাবে ফেরাউনের হাত থেকে আল্লাহতায়ালা তাদেরকে উদ্ধার করেছিলেন, সেটার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আর অবশ্যই আমি মুসাকে অহির মাধ্যমে বলেছিলাম যে, আমার বান্দাদের নিয়ে রাতেই চলে যান।’ -সূরা ত্বহা : ৭৭ ও সূরা আশ-শোয়ারা : ৫২
যাওয়ার পথে তার সামনে সমুদ্র বাধা হয়ে দাঁড়াল। আল্লাহতায়ালা মুসাকে বললেন, ‘আপনি সমুদ্রকে লাঠি দিয়ে আঘাত করুন, ফলে তা ভাগ হরো এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতের মত হয়ে গেল।’ -সূরা আশ-শোয়ারা : ৬৩
আর এভাবেই আল্লাহতায়ালা সমুদ্র ভাগ করে দিলেন। এভাবেই কোরআন মাজিদে হজরত মুসা (আ.) ও বনী ইসরায়েলিদের নিরাপদে নীলনদ অতিক্রম করা, ফেরাউন ও তার সৈন্যবাহিনীর ডুবে মরার কাহিনী অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক ভাষায় বিবৃত হয়েছে।
এই কাহিনীর সুদূরপ্রসারী দিক-নির্দেশনার মাঝে যে দু‘টি বিষয় খুবই প্রণিধানযোগ্য তা হচ্ছে, সত্য চিরকাল বিজয়ী ও সমুদ্ভাসিত থাকে। মিথ্যা ও অসত্যের শক্তি দম্ভ অহংকার ও দর্প ক্ষণিকের জন্য উচ্চকিত হলেও পরিণামে সত্যের তেজোদীপ্ত আঘাতে মিথ্যা ও অন্যায়ের বেড়াজালে আবদ্ধ তাসের ঘরের মতো ইতিহাসের অতল তলায় হারিয়ে যায়, নিঃশেষ হয়ে যায়। কোনো অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠীই শাস্তির নিগুড় থেকে নিজেদেরকে ছলেবলে কেীশলে রক্ষা করতে পারেনি। যেমনটি আমরা জালেম ও অবিশ্বাসী ফেরাউনের জীবনে দেখতে পাই।
আজ বিশ্বজুড়ে মুসলিম মিল্লাতের উচিত ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মহিমায় বলীয়ান হয়ে সত্যাশ্রয়ী জীবনের রজ্জুকে আঁকড়ে ধরা এবং মর্সিয়া ক্রন্দনের সামিয়ানাকে ছিন্নভিন্ন করে সত্যের ঝান্ডাকে সমুন্নত করা। কেননা এ পথেই রয়েছে মুক্তি ও নিষ্কৃতি, স্বস্তি এবং তৃপ্তি।